বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ঘোষিত ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি আজ বুধবার (২৭ আগস্ট) সকাল ১০টায় রাজধানীর শাহবাগে শুরু হয়েছে। কর্মসূচিতে শুধু বুয়েট নয়, দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রকৌশল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিচ্ছেন।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, প্রকৌশল খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলা বৈষম্য, অযৌক্তিক পদোন্নতি এবং স্নাতক প্রকৌশলীদের পেশাগত মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার নীতি সংস্কারের দাবিতেই এ কর্মসূচি।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাতে ‘প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন’-এর সভাপতি ওয়ালী উল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তিনি জানান—
“আমাদের এ আন্দোলন কোনো ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়। এটি প্রকৌশল খাতে বহুদিনের অসংগতি ও বৈষম্য দূর করে একটি সুশৃঙ্খল ও ন্যায়ভিত্তিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য।”
ওয়ালী উল্লাহ আরও বলেন, দেশের সব প্রকৌশল শিক্ষার্থীকে এই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঘোষণার আগে মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। এতে বুয়েট ছাড়াও বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। রাত ৮টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়ার পর বুধবার সকাল থেকে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রকৌশল খাত সংস্কারের জন্য তিন দফা দাবি তুলেছেন। সেগুলো হলো—
(.) ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে ‘প্রকৌশলী’ উপাধি ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।
(.)কাউকে পদোন্নতি দিয়ে নবম গ্রেডে উন্নীত করা যাবে না।
(.) দশম গ্রেডের চাকরিতে কেবল স্নাতক ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীদেরই নিয়োগ দিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বর্তমান কাঠামোয় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা সমান মর্যাদা পাচ্ছেন এবং কখনো কখনো অগ্রাধিকারও পাচ্ছেন, যা চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রিধারীদের জন্য বৈষম্য তৈরি করছে।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, দেশে প্রকৌশল শিক্ষায় অধ্যয়নরত লাখো শিক্ষার্থী ভবিষ্যৎ পেশাগত জীবনে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছেন। চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পরও কর্মক্ষেত্রে মর্যাদা ও সুযোগ হারাতে হচ্ছে। এতে পেশার প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে এবং অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ভিন্ন খাতে ঝুঁকছেন।
এক শিক্ষার্থী বলেন,“আমরা চার বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে প্রকৌশল ডিগ্রি অর্জন করি। অথচ চাকরির ক্ষেত্রে ডিপ্লোমাধারীদের সমান মর্যাদা দেওয়া হয়। এটি শুধু অন্যায্য নয়, প্রকৌশল পেশার মানও প্রশ্নবিদ্ধ করে।”
কেবল বুয়েট নয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন। ফলে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ এখন সারাদেশের প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
সরকারের কাছে দ্রুত সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, দাবি আদায় না হলে কর্মসূচি আরও কঠোর হবে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় যাওয়া জরুরি। একতরফাভাবে কোনো পক্ষকে উপেক্ষা করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। তারা বলছেন, প্রকৌশল খাতে টেকসই সংস্কারের জন্য সরকার, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের মধ্যে যৌথ আলোচনার বিকল্প নেই।
‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি আজকের পরও চলমান থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তারা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
Leave a comment