আজ ২১ আগস্ট, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক ভয়াবহ ও শোকাবহ দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে, চালানো গ্রেনেড হামলায় প্রাণ হারান আওয়ামী লীগের ২৪ নেতা–কর্মী, আহত হন শতাধিক।
২১ বছর পেরিয়ে গেলেও এ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। হামলার বিচারে দীর্ঘ তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া অতিক্রম করেও ভুক্তভোগীরা এবং তাদের পরিবার ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনা। তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হন অনেক নেতা–কর্মী। এ হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমান।
২০১৮ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল–১ এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। তাতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
কিন্তু গত বছরের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ওই রায় বাতিল করে সব আসামিকে খালাস দেন। আদালত পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করে, “দেশের ইতিহাসে এটি একটি জঘন্য ও মর্মান্তিক ঘটনা হলেও মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি।” একইসঙ্গে নতুন করে বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। চলতি বছরের ১৭ জুলাই থেকে সর্বোচ্চ আদালতে আপিলের শুনানি শুরু হয়। বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে চতুর্থ দিনের শুনানি, আর আজ বৃহস্পতিবারও শুনানি অব্যাহত রয়েছে।
বর্তমানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ মামলাটির শুনানি করছেন। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্যাহ আল মাহমুদ এবং আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহানসহ একাধিক সিনিয়র আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন করছেন।
হামলায় নিহত ও আহতদের পরিবার এখনও ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় আছেন। তারা মনে করছেন, দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক সহিংসতার এমন দৃষ্টান্তমূলক ঘটনায় বিচারহীনতা ভবিষ্যতে আরও বড় হুমকি তৈরি করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
২১ বছর পেরিয়েও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা অন্যতম আলোচিত ইস্যু হিসেবে রয়ে গেছে। আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ই এখন নির্ধারণ করবে, এ ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের ন্যায়বিচার আদৌ প্রতিষ্ঠিত হবে কি না।
Leave a comment