ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের কিস্তার জেলার চাশোতি গ্রামে ভয়াবহ মেঘ বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ জনে পৌঁছেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে, নিখোঁজদের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বিবেচনায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকালে হঠাৎ করেই ছোট একটি এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এই অস্বাভাবিক বৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ঝরনা ও নদীগুলোতে হঠাৎ পানি বেড়ে যায় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে আকস্মিক বন্যা আঘাত হানে। দ্রুতগামী পানির স্রোতে গ্রামটির বহু ঘরবাড়ি, দোকান ও অবকাঠামো ভেসে যায়।
স্থানীয় প্রশাসনের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একইসঙ্গে ধ্বংসস্তূপ ও কাদামাটি থেকে ১৬৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় স্থানীয় হাসপাতাল ও সামরিক চিকিৎসা শিবিরে চিকিৎসা চলছে।
দুর্যোগের পরপরই রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (এসডিআরএফ), জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী যৌথভাবে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় উদ্ধারকাজে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সরু রাস্তা, ভাঙা সেতু ও অবিরাম বৃষ্টিপাত উদ্ধারকাজকে ধীর করে দিয়েছে।
কিস্তার জেলা সদর থেকে চাশোতি গ্রাম প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে এবং শ্রীনগর শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ভারী যন্ত্রপাতি ও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং প্রয়োজনীয় সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “মানবিক সহায়তা ও পুনর্বাসনে কেন্দ্রীয় সরকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।”
জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে এবং খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। ভারতের উত্তরাঞ্চল এ বছর একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়েছে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিমালয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমন আকস্মিক ও প্রবল বৃষ্টিপাতের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে।
মেঘ বিস্ফোরণ (Cloudburst) হলো স্বল্প সময়ে অস্বাভাবিক মাত্রার বৃষ্টিপাত, যা সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলে ঘটে। প্রতি ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হলে সেটিকে মেঘ বিস্ফোরণ ধরা হয়। এর ফলে পাহাড়ি ঢাল থেকে তীব্র বন্যা নেমে এসে বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ ঘটায়।
চাশোতি গ্রামের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, তারা জীবনে এমন ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখেননি। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ ইয়াকুব বলেন, “সবকিছু কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে গেল। নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে গিয়ে আমাদের বাড়িঘর ভাসিয়ে নিল। এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন, এবং স্বজনরা ভাঙা ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপের পাশে প্রিয়জনের অপেক্ষা করছেন। প্রশাসন জানিয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
Leave a comment