ডাবের পানি বহুদিন ধরেই পরিচিত প্রাকৃতিক সুপারড্রিংক হিসেবে। এতে ক্যালরির পরিমাণ কম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রোলাইট থাকে, যা শরীরকে দ্রুত হাইড্রেট করে এবং গরমে আরাম দেয়। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো থেকে শুরু করে হজমশক্তি উন্নত করার মতো নানা উপকারের জন্য এটি জনপ্রিয়। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এই প্রাকৃতিক পানীয় সবার জন্য সমান উপকারী নয়—বরং কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিকরও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ২০০ মিলিলিটার ডাবের পানিতে প্রাকৃতিক চিনি থাকে ৬–৭ গ্রাম। ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত ওঠানামা করাতে পারে। বিশেষত বোতলজাত ডাবের পানিতে অতিরিক্ত চিনি মেশানো থাকে, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করতে পারে। ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এটি সীমিত পরিমাণে বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া না খাওয়াই নিরাপদ।
যাঁদের ডাবে অ্যালার্জি আছে, তাঁদের জন্য ঝুঁকি আরও বেশি। ডাবের প্রোটিনে সংবেদনশীলদের ক্ষেত্রে চুলকানি, ত্বকে ফুসকুড়ি, ফোলা, এমনকি গুরুতর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া বা অ্যানাফাইল্যাক্সিস হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের অ্যালার্জি আক্রান্তদের প্রায় ৯০ শতাংশের উপসর্গ ত্বকে দেখা দেয়, আর বাকি অংশের ক্ষেত্রে একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সমস্যা তৈরি হয়। বাদামে অ্যালার্জি থাকলে ডাব খাওয়ার আগে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া জরুরি।
ক্রনিক কিডনি রোগ বা কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া রোগীদের জন্য ডাবের পানির পটাশিয়াম বিপজ্জনক হতে পারে। কিডনি যদি অতিরিক্ত পটাশিয়াম ছেঁকে ফেলতে না পারে, তবে রক্তে এর মাত্রা বেড়ে হাইপারক্যালেমিয়া হতে পারে, যা পেশি দুর্বলতা, বমিভাব ও অনিয়মিত হৃদ্স্পন্দনের কারণ হতে পারে। একইভাবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খাওয়ার সময় ডাবের পানি খেলে শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে একই ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।
এ ছাড়া সর্দি-কাশি বা ফ্লুর সময় ডাবের পানি উপসর্গ বাড়াতে পারে। আয়ুর্বেদসহ প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রে ডাবের পানি ঠান্ডা প্রকৃতির বলে উল্লেখ আছে, যা শ্লেষ্মা উৎপাদন বাড়াতে বা শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে অসুস্থতা দীর্ঘায়িত করতে পারে। ঘন ঘন সর্দি-কাশি হয় বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম এমন ব্যক্তিদের জন্য শীতকালে এটি এড়িয়ে চলাই ভালো।
যাঁরা ইলেকট্রোলাইট-নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন, তাঁদের জন্যও ডাবের পানি উপযুক্ত নাও হতে পারে। এতে থাকা পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে শরীরে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়ে ক্লান্তি, পেশি টান ধরা বা অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসকরা মনে করিয়ে দেন, ডাবের পানি অনেকের জন্য স্বাস্থ্যকর হলেও এটি সবার জন্য নয়। ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, খাবারে অ্যালার্জি, ঘন ঘন সর্দি-কাশি বা ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যের সমস্যা থাকলে এই পানীয় খুব সতর্কতার সঙ্গে বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াই উত্তম। প্রাকৃতিক হলেও, ভুল সময়ে বা ভুলভাবে গ্রহণ করলে উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে।
Leave a comment