হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় পারিবারিক বিরোধ ও পাওনা টাকার জেরে ভাবি-ভাতিজিসহ তিনজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যার মামলায় শাহ আলম ওরফে তাহের উদ্দিন (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ মো. কায়সার মোশাররফ ইউসুফ এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় মাধবপুর উপজেলার বীরসিংহপাড়ায় ঘটনাটি ঘটে। আসামি শাহ আলম ওইদিন তার ভাবি জাহানারা খাতুন (৪৫) ও ভাতিজি শারমিন আক্তার (২৩)-এর ঘরে প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বারবার আঘাত করে। তাদের চিৎকারে প্রতিবেশী শিমুল মিয়া (২৫) এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। ঘটনাস্থলেই জাহানারা মারা যান এবং গুরুতর আহত শারমিন ও শিমুলকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার সময় নিহতদের স্বামী ও পিতা গিয়াস উদ্দিন প্রবাসে ছিলেন। পরবর্তীতে নিহতের ভগ্নিপতি হাজী মো. মোহন মিয়া একমাত্র আসামি শাহ আলমের বিরুদ্ধে মাধবপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ একইদিন শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে শাহ আলম স্বীকার করেন যে, গ্রিস প্রবাসে থাকার সময় তিনি একাধিকবার জাহানারাকে টাকা পাঠান। এছাড়া পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার ক্ষোভ থেকে দেশে ফিরে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন।
২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর মাধবপুর থানা পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত রায় ঘোষণা করেন। আদালতের স্টেনোগ্রাফার মুখলেছুর রহমান জানান, আদালত মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি তিন লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন।
নিহত জাহানারা খাতুনের স্বামী গিয়াস উদ্দিন বলেন, “আমি আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। এখন রায় দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাই।” অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, “এই রায় দ্রুত কার্যকর হলে সমাজে এমন অপরাধ করার সাহস কেউ পাবে না।” আইনজ্ঞরা মনে করছেন, এই রায় সমাজে পারিবারিক বিরোধ বা আর্থিক লেনদেনের জেরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধে বার্তা বহন করবে।
Leave a comment