Home জাতীয় জুলাই ২০২৪-এর সহিংসতা : ত্রুটিপূর্ণ গ্রেপ্তার, ঝুঁকিপূর্ণ বিচার 
জাতীয়

জুলাই ২০২৪-এর সহিংসতা : ত্রুটিপূর্ণ গ্রেপ্তার, ঝুঁকিপূর্ণ বিচার 

Share
Share

ব্রিটিশ মানবাধিকার কর্মী এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন, যেখানে তিনি ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের সহিংসতা পরবর্তী বিচারপ্রক্রিয়ার জটিলতা ও সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন। এখানে সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো:

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের হাতে শত শত মানুষ নিহত এবং হাজারো আহত হন। আন্দোলনকারীদের দিক থেকেও কিছু মৃত্যু হয়। তখন এই ঘটনার বিচার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে দুই রকম বিচার চলছে-
১. সাধারণ আদালতে মামলা:
• হাজারের বেশি মামলা হয়েছে, এর মধ্যে শত শত হত্যার অভিযোগ।
• অনেক নিরপরাধ মানুষকেও শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
• তদন্ত ছাড়াই মানুষকে আটক করা হয়েছে, আবার জামিনও মিলছে না অনেকের।
• পুলিশ ৯ মাস পর বলেছে, এখন থেকে ভিডিও, ছবি বা সাক্ষী ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।
• আইনে কিছু সংশোধন আনা হলেও ত্রুটিপূর্ণ গ্রেপ্তার বন্ধ হয়নি।
• আদালতের আচরণও রাজনৈতিক পরিচয়ের ওপর নির্ভর করছে — পরিচিত কেউ হলে জামিন মেলে না।

২. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT):
• মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে এখানে।
• আইন কিছুটা উন্নত হলেও কিছু বড় সমস্যা থেকে গেছে, যেমন:
◦ অভিযোগ ছাড়াই গ্রেপ্তার।
◦ চূড়ান্ত রায় ছাড়া আপিলের সুযোগ নেই।
◦ অপরাধের সংজ্ঞায় অস্পষ্টতা রয়েছে।
মৃত্যুদণ্ড নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
• বিচার নিরপেক্ষ হতে হবে—তা না হলে ভবিষ্যতেও ট্রাইব্যুনাল সমালোচিত হবে।
সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
• অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি বিনা প্রমাণে মাসের পর মাস জেলে আছেন।
• সরকার কিছু আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়মুক্তির আদেশ জারি করেছে—যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
• দ্রুত একটি দক্ষ ও নিরপেক্ষ কেন্দ্রীয় তদন্ত দল গঠন করা যেত, কিন্তু তা হয়নি।

মূল সমস্যা ও সুপারিশ
• গ্রেপ্তার ও জামিনের ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার হচ্ছে।
• নির্দোষ ব্যক্তিদের হয়রানি, দীর্ঘমেয়াদি আটক এবং নিরপেক্ষ তদন্তের অভাব, বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হ্রাস করছে।
• একটি নিরপেক্ষ ও দক্ষ কেন্দ্রীয় তদন্ত কমিটি হলে এ অবস্থা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত।
• বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখাই হবে ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

ডেভিড বার্গম্যানের মতে- বিচার হওয়া দরকার, তবে সেটা হতে হবে নিরপেক্ষ, প্রমাণভিত্তিক ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত। বিচার ব্যবস্থায় ন্যায্যতা না থাকলে, দায়মুক্তি দেওয়া হলে, বা নিরপরাধ মানুষকে জেলে রাখলে—তা দেশের গণতন্ত্র ও বিচার ব্যবস্থার জন্য বিপজ্জনক।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

রাস্তার পাশে ফেলে যাওয়া নবজাতক পেল নতুন পরিবার

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় রাস্তার পাশে কম্বলে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার হওয়া একদিন বয়সী নবজাতক কন্যাশিশুটি অবশেষে পেল নতুন ঠিকানা। আইনি প্রক্রিয়া, সামাজিক যাচাই-বাছাই এবং...

ফিলিস্তিনি পাসপোর্টধারী ও ৭ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

ফিলিস্তিনি পাসপোর্টধারী এবং সাতটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। জাতীয় ও জননিরাপত্তার ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে এই সিদ্ধান্ত...

Related Articles

ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ মেঘনা–গোমতী সেতুর টোল আদায়ের কার্যাদেশে অনিয়ম, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার...

তারেক রহমানের পক্ষে বগুড়া-৬ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ (সদর) আসন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান...

ওসমান হাদির মৃত্যুতে কমনওয়েলথ মহাসচিবের শোক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন...

ঝিনাইগাতীতে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে বৃদ্ধ নিহত

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় দুইটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আবু বক্কর (৬০) নামে এক...