গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংস ঘটনার জেরে জারি করা কারফিউর মেয়াদ আবারও বাড়ানো হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শুরু হওয়া নতুন দফার কারফিউ চলবে আগামীকাল শনিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত। এর পরবর্তী সিদ্ধান্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
গোপালগঞ্জ জেলায় টানা তৃতীয় দিনের মতো কারফিউ বলবৎ থাকছে। বুধবার রাতে শুরু হওয়া প্রথম দফার কারফিউ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলার পর, ওই দিন সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য কারফিউ বর্ধিত করার ঘোষণা দেন। আজ শুক্রবারও তা পুনরায় বাড়ানো হলো।
আজ দুপুরে কারফিউ সাময়িকভাবে শিথিল ছিল—বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত লোকজনকে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা ও জরুরি কাজ সারার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে বেলা গড়াতেই আবার গোটা শহরে টহল জোরদার হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
এর আগে গত বুধবার এনসিপির জনসভা ঘিরে হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় পুরো শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ওইদিনই গোপালগঞ্জ সদর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের প্রাণহানি হয়েছে, আহত হয়েছেন অনেকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন এলাকা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। কারফিউ চলাকালে রাতভর অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
শহরের প্রধান সড়কগুলো, বিশেষ করে সদর থানা সংলগ্ন এলাকা, ডিসি অফিস চত্বর ও এনসিপির সমাবেশস্থলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখা হয়েছে। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ, দোকানপাট ও মার্কেট সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা চরম আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক জানান, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না এলে কারফিউর মেয়াদ আরও বাড়তে পারে। একাধিক সূত্র জানায়, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কেন্দ্র থেকে মন্ত্রিপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল গোপালগঞ্জে আসার কথা রয়েছে।
এনসিপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বিনা উসকানিতে হামলা হয়েছে। অপরদিকে প্রশাসন বলছে, উসকানিমূলক বক্তব্য ও উত্তেজক আচরণের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
জেলাজুড়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। রাস্তায় মানুষ নেই বললেই চলে। শুধু কড়া নিরাপত্তার চাদরে মোড়া শহরটি যেন কোনো যুদ্ধক্ষেত্রের ছবি আঁকে। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত স্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রত্যাশা করছেন, যাতে তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।
Leave a comment