তীব্র ভালোবাসা, সম্পর্কের ভাঙন, মনের ভিতরে জমে থাকা অসহ্য যন্ত্রণা সবকিছুর শেষ লিখে গেল এক মেধাবী তরুণ। ইস্কাটন রোডে অবস্থিত বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী রাগিব নুর নুহান আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে (১৮) চিরদিনের মতো পৃথিবী থেকে বিদায় নিল ।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর মাহবুবুর রহমান ও নাহার রহমান দম্পতির ছেলে সন্তান নুহান। শনিবার ভোররাতে তিনি আত্মহত্যা করেন ।
আত্মহত্যার আগে তার রেখে যাওয়া ইংরেজিতে লেখা একটি নোটবুকে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে বেদনাভরা হৃদয়ের যন্ত্রনা , নিঃশেষ হওয়া ভালোবাসা এবং পরিবারের প্রতি অশেষ মমতা।
বাংলা অনুবাদ অনুযায়ী নোটবুকে প্রেমিকার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যত্ন নিও নিজের। এছাড়াও পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বলেন; দুঃখিত মা, আমি এই জীবন শেষ করছি… প্রিয় সুহা ও রিয়া ( দুই বোন) , তোমরা যদি কখনো আমাকে ভালোবেসে থাকো, তাহলে কখনো নিজেকে কষ্ট দিও না। তোমরা যদি চাও আমি শান্তিতে থাকি, তাহলে অনুগ্রহ করে ওকে (প্রেমিকা) কষ্ট দিও না। ও-ই আমার সবকিছু। ওকে আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। ইয়ামিনের যত্ন নিও, ও-ই আমার একমাত্র বন্ধু। ভালো মেয়ে হও রিয়া । শুহা ও রিয়া — আমি তোমাদের ভালোবাসি। মায়ের উদ্দেশে নুহান লিখেন- অনুগ্রহ করে আমাকে ক্ষমা করে দিও আম্মু!
নুহান আরো লিখেছেন, “অমিত এবং রিফাত ভাইয়া, সফল হও… মামা, আপনি আমার দেখা সবচেয়ে মিষ্টি মামা… আপনি সবচেয়ে সাপোর্টিভ ছিলেন জুলু মামা… নানু, আমার জন্য অপেক্ষা কোরো না। আমি আর কখনো তোমার রান্না করা খাবার খেতে পারবো না।
শুভ ও শামিম, তোমরাও সফল হও। আমি তোমাদের সবাইকে ভালোবাসি, কিন্তু আমি দুর্বল ছিলাম!!! আব্বু তোমাকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি, আমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য…” এছাড়াও চিঠির নিচে নুহান নিজের মোবাইল ফোনের পাসওয়ার্ড লিখে গিয়েছেন।
পরিবার সুত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে প্রেমিকার সাথে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না নুহানের। এরপর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে তিনি। তবে এমন সিদ্ধান্ত নেবে বুঝতে পারেনি তারা।
নুহানের মামাতো ভাই সারফুল আবেদিন রিফাত জানান, “গতকাল রাত চারটা পর্যন্ত একসাথে খেলা দেখেছি আমরা । খেলা শেষে সবাই বড় বোন এর হাতে চিকেন ফ্রাই খাই তার পর অন্য রুমে ঘুমাইতে যাই। পরিক্ষা থাকায় ও পড়তে বসে। সকাল ৭ টার দিকে ওকে ওর মা জাগাতে গেলে দেখে দরজা খুলছে না। পরে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখি, গলায় ফাঁস দিয়েছে নুহান । পুলিশকে জানালে তারা এসে লাশ উদ্ধার করে…”
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, “লাশ উদ্ধারের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয় ময়না তদন্তের জন্য এবং ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ” ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা নাহার রহমানের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিয়েছে ।
১৩ বছর আগে বিচ্ছেদ হয় নুহানের বাবা-মায়ের। এরপর থেকে মা ও দুই বোনের সঙ্গে থাকত নুহান। সম্প্রতি রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছিল তারা । এ বিষয়ে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
Leave a comment