Home রাজনীতি আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনে ভুলের অন্তহীন পরিসংখ্যান
আওয়ামী লীগ

শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনে ভুলের অন্তহীন পরিসংখ্যান

Share
Share

 

বিগত পাঁচ হাজার ৬৯০ দিন ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নানা সংকট ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। তাঁর শাসনকালে অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যা দেশের মানুষের জন্য সুবিধাজনক ছিল, আবার কিছু সিদ্ধান্ত ছিল দেশবাসীর জন্য ক্ষতিকর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার শাসনকাল পরিপূর্ণ ছিল ভুল ও অযথা সিদ্ধান্তের সমাহারে, যা শেষ পর্যন্ত তাঁর পতনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তার শাসনের ভুলগুলো নিয়ে চলছে সমালোচনা ও গবেষণা, কিন্তু দুঃখজনকভাবে আওয়ামী লীগ বা তার দলীয় নেতাদের মধ্যে এসব ভুলের ব্যাপারে কোনো স্বীকৃতি বা আলোচনা নেই। দলের ৪৫ হাজার নেতাকর্মী বর্তমানে ভারতে কিংবা অন্যান্য দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে, অধিকাংশই ভারতে।

শেখ হাসিনার শাসনাধীন সময় যে ভুলগুলো তিনি করেছেন, সেগুলো সম্পর্কে যথেষ্ট আলোচনা হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তা হয়নি। এই প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে, তাঁর শাসনকালের গুরুত্বপূর্ণ ভুলগুলোর ওপর।

প্রথম ভুল ছিল গণতন্ত্র হত্যা ও বিরোধী মতকে দমন করা। শেখ হাসিনার শাসনে গণতন্ত্রের যে ব্যাপক সংকোচন ঘটেছে, তা বিশ্বব্যাপী সমালোচিত। দেশের রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট করতে গিয়ে তিনি বিরোধী দলের নেতাদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছেন এবং তাদের মুক্ত মত প্রকাশের সুযোগ ক্ষুন্ন করেছেন। দ্বিতীয় ভুল ছিল রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা। তিনি দলের মধ্যে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে অনেক কিছুই সরিয়ে দেন, যা দেশের সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

এরপর তৃতীয় ভুল ছিল গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ। শেখ হাসিনা তার শাসনকালে মিডিয়ার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সংবাদ পরিবেশনকারী মিডিয়া প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা দেশবাসীর তথ্য প্রাপ্তি এবং তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ সীমাবদ্ধ করে দেয়।

চতুর্থ ভুল ছিল নিজেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোতে দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আর্থিক সুবিধা আদায়ের জন্য নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকলেও সরকার তাতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।

পঞ্চম ভুল ছিল মানুষকে হেয় করা। একের পর এক রাজনৈতিক বিরোধীদের অপমান ও হেয় করা, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া—এসব তার শাসনের অন্যতম দৃষ্টান্ত ছিল। এই আচরণ রাষ্ট্রের মূলনীতি ও নৈতিকতাকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে না।

ষষ্ঠ ভুল ছিল ভারতের উপর শতভাগ নির্ভরশীল থাকা। ভারতকে এতটা প্রশ্রয় দেওয়া, দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো এবং তাদের সহায়তায় ক্ষমতায় থাকা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকির সৃষ্টি করেছে।

সপ্তম ভুল ছিল তথাকথিত ভারসাম্যের নামে বন্ধুহীন হয়ে যাওয়া। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও দেশীয় অবস্থানে যে ধরনের ভারসাম্য তৈরি করার চেষ্টা করেছেন, তার ফলাফল দেশের জন্য অমঙ্গলজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অষ্টম ভুল ছিল টাকা লুট করা এবং বিদেশীদের লুটে সহায়তা করা। বিভিন্ন সময় দেশের বাইরে গিয়েও তিনি শুধু নিজেদের পকেট ভরানোর চেষ্টা করেছেন এবং বিদেশি শক্তির সাহায্য নিয়ে দেশে রাজনৈতিক অবস্থান বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন।

নবম ভুল ছিল নির্বাচনকে পকেটস্থ করা। তার শাসনে ভোটারদের অধিকার শিথিল করা, নির্বাচন ব্যবস্থাকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা এবং বিরোধী পক্ষের জন্য কোনও সুযোগ না দেওয়া নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশুদ্ধতার ওপর বিরাট আঘাত হেনেছে।

দশম ভুল ছিল বঙ্গবন্ধুকে আলাদা না করা। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শের পাশে নিজের অবস্থান দৃঢ় করা, অথচ ইতিহাস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি রাজনৈতিক শ্রদ্ধা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেখাতে তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন।

এছাড়া আরো অনেক ভুলের মধ্যে রয়েছে গুম-খুনকে ক্ষমতায় থাকার হাতিয়ার বানানো, সরকার ও দলকে এক করে ফেলা, বিচার বিভাগকে নিজের কবজায় নেয়া, ব্যক্তিপূজায় নিজেকে সঁপে দেওয়া এবং দেশের নিয়ন্ত্রণ অন্য শক্তির কাছে তুলে দেয়া।

শেখ হাসিনার শাসনকালকে একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে তার অযথা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। তার সিদ্ধান্তগুলো সাধারণ মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে ছিল, যা দেশের প্রগতিশীলতা ও গণতন্ত্রের চেহারা বদলে দিয়েছে। আজ তার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে, যা তাঁর পতনের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আরও উল্লেখযোগ্য একটি ভুল ছিল ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণে না রাখা। ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড ছিল দলীয় স্বার্থে পরিচালিত, এবং তারা নিজেরাই নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছিল। এতে দেশের ছাত্র সমাজের প্রতি নেতিবাচক বার্তা গিয়েছে।

তারপরও কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, শেখ হাসিনার শাসনকালে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে ভুলগুলো করা হয়েছে, তার কিছু কিছু ভুল ছিল তার নিজেদের অজান্তে। তবে এসব ভুলের পরিণতি যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য কী ধরনের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি নিয়ে এসেছে, তা সবাই এখন হাড়ে হাড়ে অনুভব করছে।

শেষ পর্যন্ত, রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মন্তব্য করেন যে, শেখ হাসিনার শাসনকাল পৃথিবী ও জাতির ইতিহাসে একটি চরম ভুলের শাসন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, যা আওয়ামী লীগের ইতিহাসেও একটি অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

ভারতের স্বাধীনতা দিবসের নাটকে মুসলিম মেয়েদের সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন

ভারতের গুজরাট রাজ্যের ভাবনগরে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে মঞ্চস্থ এক নাটককে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ১৫ আগস্ট কুম্ভরওয়াড়া এলাকার...

ঢাকায় ট্রাফিক অভিযান, এক দিনে ২ হাজারের বেশি মামলা দায়ের

রাজধানীতে ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সোমবার (১৮ আগস্ট) দিনব্যাপী পরিচালিত বিশেষ অভিযানে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে...

Related Articles

আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি সুলতান শরীফ আর নেই

আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ শরীফ আর...

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ২১ বছর আজ: সর্বোচ্চ আদালতে চলছে আপিলের শুনানি

আজ ২১ আগস্ট, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক ভয়াবহ ও শোকাবহ দিন। ২০০৪...

কাশিমপুর কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ, হাসপাতালে ডা. দীপু মনি

গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারে বন্দি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ...

জুলাই গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ চলছে জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। সোমবার (১৮ আগস্ট)...