সিলেটে ৫ দফা দাবিতে আজ সকাল থেকে পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সিলেট জেলা পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের এই ধর্মঘট আজ শনিবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়। ধর্মঘটের আওতায় ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ সব ধরনের পণ্য পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। ধর্মঘটের মূল দাবি হলো সিলেটে বন্ধ থাকা পাথরকোয়ারি খুলে দেওয়া, ক্রাশার মেশিন ধ্বংস ও অভিযান বন্ধ, পাথর পরিবহনকারী ট্রাক আটকানো বন্ধ, চালকদের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ এবং সিলেট জেলা প্রশাসকের অপসারণ। ধর্মঘটকারীরা জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের দাবি পূরণ না হলে আগামী ৪৮ ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ধর্মঘটের শুরুতে সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সিলেট জেলা পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে এলাকার হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন এবং তাদের দাবির পক্ষে শক্তিশালী বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে বক্তারা জানান, সিলেটের পাথরকোয়ারিগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে থাকায় এখানে বসবাসকারী অগণিত মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। পাথর পরিবহনকারী শ্রমিকদের অবস্থাও অনেকটা সংকটমুখী হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই একপ্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
একজন ধর্মঘটকারী বলেন, সিলেটের পাথরকোয়ারিগুলো খুলে দিলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পথও খুলে যাবে। এর মাধ্যমে এলাকার অর্থনীতি উন্নতি লাভ করবে এবং হাজার হাজার মানুষের জীবন জীবিকার পথ সুগম হবে। তারা আরও দাবি করেন, পাথর পরিবহনকারী ট্রাক আটকানো এবং চালকদের যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে তা বন্ধ করা হোক। অনেক চালক অভিযোগ করছেন, বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের হয়রানি করে।
ধর্মঘটের বিষয়ে সিলেটের পাথর–সংশ্লিষ্ট মালিক ও ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের নেতা একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আজ সরকারি ছুটি এবং রোববার আশুরার ছুটির দিন, তাই ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। তার মতে, জনগণের পক্ষে এবং দেশের অর্থনীতির জন্য এ ধরনের কর্মসূচি যৌক্তিক নয়, কারণ এসব ছুটির দিনে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকলে আরও বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
সিলেট জেলা পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, বিকেলে সিলেট জেলার পাথর–সংশ্লিষ্ট মালিক ও ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের আহ্বানে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে, সিলেটের বিভিন্ন এলাকা এবং আশপাশের অঞ্চলগুলোতে ধর্মঘটের কারণে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহন, সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। সিলেটসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগে সমস্যা তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ী মহল এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
এছাড়া, সিলেটে পাথরকোয়ারি খোলার দাবিতে এর আগে বিক্ষোভ ও অনশন কর্মসূচিও পালিত হয়েছিল। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে টাস্কফোর্সের অভিযান চলাকালে অবৈধ পাথর ভাঙার যন্ত্র ধ্বংস এবং পাথরের এক বিশাল চালান জব্দ করা হয়েছিল। সেই সময় পাথর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, যা এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। ধর্মঘটকারীরা আবারো তাদের দাবি জানিয়ে বলছেন, যদি তাদের দাবি মেনে নেওয়া না হয় তবে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন।
ধর্মঘটের কারণে সিলেটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম এবং জনজীবনে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পাথর শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাজারো মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উঠেছে, যাতে সিলেট অঞ্চলের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখা যায়।
ধর্মঘটের চলমান পরিস্থিতি এবং পাথরকোয়ারি খোলার দাবির বিষয়ে সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রশাসন আশ্বস্ত করেছে যে, পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান করতে তারা কাজ করছেন।
উল্লেখ্য, সিলেট জেলার পাথরকোয়ারিগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় স্থানীয় অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানকার মানুষ অনেকেই পাথর শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তাদের জীবনযাত্রা এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। পাথর শিল্প পুনরায় চালু হলে হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থান পাবেন এবং এলাকার অর্থনীতিও উন্নতি লাভ করবে বলে মনে করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা।
ধর্মঘটকারীরা তাদের ৫ দফা দাবি পূরণের জন্য তীব্র আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার হুমকি দিয়েছেন।
Leave a comment