বিশ্ব আবারও দাঁড়িয়ে পড়েছে এক নতুন স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখোমুখি। কোভিড-১৯ এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট Omicron XBB দ্রুত সংক্রমণক্ষম রূপে ছড়িয়ে পড়ছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে, আর তার ঢেউ এসে লেগেছে বাংলাদেশেও। এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি স্থানীয় স্তরেও নানা প্রস্তুতি এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এমন এক সময়েই দৃশ্যমান হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি ইউনিটের যুব রেড ক্রিসেন্ট সদস্যদের মানবিক ও সচেতনতামূলক উদ্যোগ, যা নতুন করে উজ্জীবিত করেছে স্বাস্থ্যসচেতনতা আন্দোলন।
শহরের ব্যস্ততম সড়ক, মোড়, মার্কেট ও মসজিদের সামনে সকাল থেকে শুরু করে রাত অবধি ঘুরে বেড়িয়েছে একদল তরুণ। কারও হাতে ছিল লিফলেট, কারও ব্যাগভর্তি মাস্ক, আর সবার চোখেমুখে ছিল দায়িত্বশীলতার দীপ্তি। তারা কারও মুখে মাস্ক তুলে দিয়েছে, কাউকে দাঁড় করিয়ে ব্যাখ্যা করেছে হাত ধোয়ার গুরুত্ব, আবার কারও হাতে দিয়েছে লিফলেট—যেখানে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল Omicron XBB থেকে সুরক্ষার সহজ নিয়মকানুন।
এই কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি ইউনিটের যুব প্রধান আ. ন. ম তামজীদ। তাঁর নেতৃত্বে গঠিত স্বেচ্ছাসেবক দলটি একপ্রকার নিজ উদ্যোগেই আয়োজন করেছে এই কার্যক্রম। তাদের অনেকের মুখে মাস্ক ছিল, হাতে গ্লাভস, আর কাঁধে রেড ক্রিসেন্টের লাল চিহ্নিত ব্যাগ। জনসমাগমের সময় তারা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সতর্কবার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। কর্মসূচির মূল উপজীব্য ছিল—‘করোনা গেছে বলে ভাববেন না, বরং সচেতনতাই হোক রক্ষার ঢাল।’
তামজীদ বললেন, “শুধু মাস্ক বিলানোই নয়, আমরা গুজব রোধ করতেও কাজ করছি। অনেকেই এখনও ভাবেন করোনার সময় শেষ। অথচ Omicron XBB-এর মতো ভ্যারিয়েন্ট আবারও প্রমাণ করছে, অসচেতন হলে বিপদ হতে পারে। তাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি মানুষের মধ্যে তথ্যভিত্তিক সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া।”
সচেতনতা কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবকেরা মানুষের সঙ্গে আলাপ করেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাস্তবিক প্রয়োজন বোঝানোর চেষ্টা করেছেন এবং কিছু মৌলিক বার্তা তুলে ধরেছেন: মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, সাবান ও স্যানিটাইজার দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া দরকার, ভিড় এড়িয়ে চলা উচিত এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষ নজর দেওয়া হয় মসজিদের সামনে নামাজ শেষে মুসল্লিদের মাঝেও। তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় লিফলেট, মৌখিক বার্তা এবং মাস্ক। অনেক মসজিদ কর্তৃপক্ষও এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সহায়তা করেছেন। পাশাপাশি ফুটপাতের হকার, রিকশাচালক, দোকানদার এমনকি কিশোর বয়সী পথশিশুদের মাঝেও সচেতনতা ছড়ানো হয়। কোথাও কেউ বিরূপ প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বরং উৎসাহ দিয়ে পাশে দাঁড়ায় এই তরুণ দলটির।
এই উদ্যোগের সময় দেখা যায়, অনেক পথচারী মাস্ক না পরেই বের হয়েছিলেন, কিন্তু রেড ক্রিসেন্টের সদস্যদের কথা শুনে তারা তাৎক্ষণিকভাবে মাস্ক পরেন। কেউ কেউ বলেন, এতদিনে বুঝতে পারছি স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্ব। অনেকে নিজের বাচ্চাদের জন্য বাড়তি মাস্ক চেয়ে নেন, কেউ আবার মোবাইলে ছবি তুলে ভাগ করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
রেড ক্রিসেন্টের এই কার্যক্রম যেন একটুকরো মানবতা ও দায়িত্ববোধের প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়ায় চট্টগ্রামের জনজীবনে। শহরের যানজট, গরম ও ব্যস্ততা উপেক্ষা করে যারা দিনের পর দিন এভাবে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছে, তারা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। যুব প্রধান তামজীদ শেষ মুহূর্তে বললেন, “আমরা চাই, মানুষ শুধু বাঁচুক না, সচেতন থাকুক। কারণ সচেতনতা মানেই জীবন বাঁচানোর বিজ্ঞান। যদি আমাদের প্রচেষ্টায় কেউ একটি বারও ভেবে দেখে ‘আমি কী করছি?’, সেটাই আমাদের সার্থকতা।”
এই কর্মসূচি কেবল একটি দিনের উদ্যোগ নয়। এটি একটি মনোভাব, একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা, যেখানে তরুণরা প্রমাণ করে দিচ্ছে—তারা শুধু ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত নয়, বরং বর্তমানের চ্যালেঞ্জ সামলাতেও যথেষ্ট দক্ষ ও আন্তরিক।
মো. রেজাউল মোস্তফা
চট্টগ্রাম মহানগর প্রতিনিধি
Leave a comment