Home বিজ্ঞান এইডস ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করলো একদল বিজ্ঞানী
বিজ্ঞান

এইডস ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করলো একদল বিজ্ঞানী

Share
Share

একটি মাত্র ইনজেকশনের মাধ্যমে এইডসের কারণ HIV-এর সদৃশ ভাইরাস SIV সফলভাবে মুছে ফেলেছে এক নতুন জিন সম্পাদনাভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি—এমনটাই জানিয়েছেন টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের লুইস কাটজ স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা। রিসাস প্রজাতির বানরের ওপর চালানো পরীক্ষায় এই পদ্ধতির কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা উভয়ই প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে Gene Therapy সাময়িকীতে।
এই গবেষণায় ব্যবহৃত হয় EBT-001 নামের একটি SIV-নির্দিষ্ট CRISPR-Cas9 জিন সম্পাদনা প্রযুক্তি। গবেষকদের মতে, এটি বানরের দেহে ছড়িয়ে থাকা ভাইরাসের গোপন আস্তানাগুলো থেকে ভাইরাসের জিন স্থায়ীভাবে কেটে ফেলে—যেখানে SIV বা HIV বহু বছর ধরে আত্মগোপন করে থাকতে পারে। বিশেষ করে লিম্ফ নোড, প্লীহা এবং অন্যান্য ভাইরাস লুকিয়ে থাকার টিস্যুতে এই প্রযুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করেছে এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
গবেষণা দলের প্রধান, ড. কামেল খালিলি বলেন, “একটি মাত্র ইনজেকশনের মাধ্যমে বড় আকারের প্রাণীর দেহে ভাইরাস নির্মূলের পথ সুগম হলো। এই গবেষণার সাফল্য আমাদের মানুষে প্রয়োগের পরীক্ষার পথে এগিয়ে নিল।” তিনি জানান, এই গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতেই EBT-101 নামের মানব-নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতির ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে, যা বর্তমানে পরিচালনা করছে Excision Biotherapeutics Inc.
বানরদের ওপর চালানো এই প্রাক-ক্লিনিকাল গবেষণায় নেতৃত্ব দেন প্রফেসর ট্রিসিয়া বার্ডো। তার তত্ত্বাবধানে ১০টি রিসাস বানরকে দুটি দলে ভাগ করা হয়। একটি নিয়ন্ত্রণ দল ও অন্যটি চিকিৎসা প্রাপ্ত দল। EBT-001 তিনটি ভিন্ন মাত্রায় ইনজেকশন আকারে প্রয়োগ করা হয়। কিছু প্রাণীর শরীরে উচ্চ মাত্রার ডোজ প্রয়োগ করে দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ চালানো হয়। গবেষকরা দেখতে পান, ভাইরাসের জিন শরীরের প্রায় সবকটি প্রধান টিস্যুতে কেটে ফেলা গেছে। চিকিৎসা পাওয়া প্রাণীরা ছিল সুস্থ ও স্বাভাবিক, এমনকি কিছু প্রাণী ওজনও বাড়ায়।
গবেষণার আরেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষক ড. জেনিফার গর্ডন বলেন, “এই গবেষণার সফলতা শুধু HIV নয়, বরং ভবিষ্যতে হার্পিস বা হেপাটাইটিস বি-এর মতো ভাইরাসের ক্ষেত্রেও জিন সম্পাদনার মাধ্যমে চিকিৎসা উন্নয়নের দ্বার খুলে দিয়েছে।”
এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন আরও একাধিক গবেষক, যাঁরা যুক্ত ছিলেন টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সসিশন বায়োথেরাপিউটিকস, বায়োকোয়াল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এই উদ্যোগে গবেষণা অর্থায়ন করেছে Excision Biotherapeutics Inc., যা প্রযুক্তির লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান। তবে গবেষকদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে এবং নীতিমালার আওতায় তা অনুমোদিত।
লুইস কাটজ স্কুল অব মেডিসিন ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি গবেষণা, চিকিৎসা ও শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় এবার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো, যা ভবিষ্যতে মানবজাতিকে এইডস থেকে মুক্ত করার পথে এক বড় পদক্ষেপ হতে পারে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

মুসলিম প্রধান দেশ মরক্কোতে ঈদুল আজহায় কোরবানি নিষিদ্ধ

মরক্কো সরকার ঈদুল আজহাকে ঘিরে দেশজুড়ে পশু কোরবানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় জনমনে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া। বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদের রাজকীয়...

ঈদেও সামান্য মাংসের স্বাদ পাবে না গাজার অধিকাংশ মানুষ

গাজার আকাশে হয়তো চাঁদ উঠবে ঈদের আগমনী বার্তা নিয়ে, কিন্তু ভাঙা ঘর, খালি হাড়ি আর ক্ষুধার্ত মুখগুলোর কাছে সে বার্তা শুধুই এক অদৃশ্য...

Related Articles

রহস্যময় ব্ল্যাকহোলের অজানা যত কথা

ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর—মহাকাশের এমন এক রহস্যময় অস্তিত্ব, যার মাধ্যাকর্ষণ এতটাই শক্তিশালী যে...

মানুষের ভাঙা দাঁত পুনরায় গজানোর ওষুধ আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে জাপান

মানুষের দাঁত প্রাকৃতিকভাবে পুনরায় গজানোর সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে চলেছে জাপানের বিজ্ঞানীরা।...

স্থূলতা শুধু ওজন নয়, এটি এক নীরব মৃত্যুফাঁদ

বর্তমান বিশ্বে স্থূলতা (Obesity) এক নিঃশব্দ মহামারিতে রূপ নিয়েছে। অনেকের কাছে এটি...

শুধু শ্বাস-প্রশ্বাস নয়, রক্তও তৈরি করতে পারে ফুসফুস

জীববিজ্ঞানে যুগান্তকারী এক আবিষ্কারে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউসিএসএফ) গবেষকরা ফুসফুসের এক নতুন...