
ঢাকা, ২৫ মে — দেশে শিল্পখাতে গ্যাস সংকট চরমে পৌঁছেছে। একের পর এক টেক্সটাইল কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিতে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দিচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। রবিবার রাজধানীতে জ্বালানি সংকট নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ উদ্বেগ জানান।
স্থানীয় টেক্সটাইল কারখানাগুলো দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে সুতা ও কাপড়ের প্রধান যোগানদাতা। এই কারখানাগুলোর অধিকাংশই গ্যাসনির্ভর এবং কয়েকশ’ কোটি টাকার বিনিয়োগে গড়ে ওঠা এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান বর্তমানে চরম সংকটে পড়েছে। জ্বালানির ঘাটতিতে কারখানাগুলো নিয়মিত বন্ধ থাকছে, উৎপাদন থমকে গেছে, যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে এবং ব্যবসায়ীরা ব্যাংকঋণের চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বাড়লেও খরচ বেড়েছে বহুগুণে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার গ্যাসের দাম বাড়ালেও প্রতিশ্রুত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ অবস্থায় ঈদের আগে বেতন-বোনাস দেওয়া অনিশ্চয়তায় পড়েছে অনেক কারখানা। উদ্যোক্তাদের মতে, গ্যাস সংকট অব্যাহত থাকলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেশের অর্ধেক টেক্সটাইল কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, “আমাদের উপদেষ্টা সাহেবরা যেন উটপাখির মতো আচরণ করছেন। চারপাশে কি হচ্ছে, তারা যেন দেখতেই পাচ্ছেন না। প্রতিনিয়ত আমাদের লে-অফ দিতে হচ্ছে, আর কিছুদিন পর পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হবে যে মানুষ রাস্তায় নামবে। দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থা তৈরি হতে পারে।”
ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, নীতিনির্ধারকেরা শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু বাস্তব সমাধান নেই। এমনকি বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ঈদ উপলক্ষে দশ দিনের ছুটিরও কঠোর সমালোচনা করেন তারা। বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম পারভেজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বেতন না দিতে পারলে সরকার থেকে হুমকি আসে—এই তারিখের মধ্যে বেতন দিতে হবে। অথচ গ্যাস নেই, ব্যাংক সুদের হার বেড়েছে, গ্যাস বিলও ঠিকমতো দিতে হবে। প্রেসার থাকে ১.৫ বা শূন্য, কিন্তু মিটার ঘুরে যাচ্ছে।”
উদ্যোক্তারা বলেন, সিস্টেম লসের নামে গ্যাস চুরি ও অপচয়ের হার ১২ শতাংশে পৌঁছেছে। তারা দাবি করেন, গ্যাস সাশ্রয়ে ধাপে ধাপে আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করতে হবে এবং স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে শিল্প খাত রক্ষা এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, এই সংকট অব্যাহত থাকলে দেশের অন্যতম রপ্তানি খাত টেক্সটাইল ধ্বংসের মুখে পড়বে, যা জাতীয় অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে।
 
                                                                         
                                                                         
			             
			             
 
			         
 
			         
 
			         
 
			         
				             
				             
				            
Leave a comment