জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় আজ আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে দাঁড়িয়ে নোবেল দাবি করেন, যিনি তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন, তিনি তাঁর স্ত্রী এবং চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তবে এই দাবির স্বপক্ষে কোনো কাবিননামা আদালতে উপস্থাপন করতে পারেননি নোবেলের আইনজীবী।
ডেমরা থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে এক নারীকে নিজের স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান নোবেল। ওই দিন রাতে তাঁকে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন এবং সেই ভিডিও ধারণ করেন। এরপর ভিডিওর ভয় দেখিয়ে সাত মাস ধরে ওই নারীকে আটকে রাখা হয়। নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নোবেলকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ভুক্তভোগী নারী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন।
আদালতের কাঠগড়ায় নোবেল ছিলেন সাদা টি-শার্ট, কালো প্যান্ট ও প্লাস্টিকের স্যান্ডেল পরিহিত অবস্থায়। তাঁর ডান হাতে হাতকড়া ছিল। আদালতের এজলাসে বিচারক আসার পর রাষ্ট্রপক্ষ মামলার অভিযোগ পড়ে শোনায়। নোবেলের আইনজীবী জসীম উদ্দিন তখন আদালতকে জানান, “ভুক্তভোগী নারী নোবেলের স্ত্রী, তিনি অন্তঃসত্ত্বা।” এ সময় বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, “আপনারা কাবিননামা এনেছেন?” উত্তরে আইনজীবী জানান, “আচমকা গ্রেপ্তারের কারণে কাবিননামা বা প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।”
পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী আদালতে বলেন, “যদি ওই নারী নোবেলের স্ত্রী হন, তবে বিয়ের কাবিননামা কোথায়? কাবিননামা বিয়ের একমাত্র বৈধ প্রমাণ। মূলত, ভুক্তভোগীকে ব্ল্যাকমেইল করে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা হয়েছে।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুরাদ হোসেন জানান, নোবেল এবং ভুক্তভোগী নারী দুজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, যাত্রাবাড়ীর একটি বাসায় মৌখিকভাবে বিয়ের মতো কোনো আয়োজন হলেও কোনো রেজিস্ট্রার্ড কাবিননামা নেই। তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, নির্যাতনের ভিডিও যে বাসায় ধারণ করা হয়েছে, সেটি নোবেলের নানাবাড়ি। সেই বাসার দ্বিতীয় তলায় থাকতেন নোবেল এবং সেখানেই রয়েছে তাঁর গানের স্টুডিও। পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকেন তৃতীয় ও চতুর্থ তলায়।
পুলিশ বলছে, ওই নারী দীর্ঘ সাত মাস ধরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি মাত্র দুইবার নিজের মায়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তাঁর পরিবার বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশকে খবর দেয়। পরে তাঁকে উদ্ধার করা হয়।
তবে নোবেলের এক আত্মীয় দাবি করেন, “ওই নারী নোবেলের স্ত্রী। তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়েছিল মাত্র। তাঁকে ধর্ষণ করা হয়নি।”
এদিকে ভুক্তভোগী নারীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার দাবি নিয়েও তদন্ত চলছে। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিশ্চিত করতে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করা হবে।
বিকেলে বিচারক এজলাস ত্যাগ করার পর পুলিশ নোবেলকে কড়া নিরাপত্তায় হাতকড়া পরিয়ে হাজতখানায় নিয়ে যায়। বৃষ্টির মধ্যে লিফটে করে তাঁকে আদালতের নিচতলায় নামিয়ে আনা হয়। এ সময় তাঁর মাথায় হেলমেট পরিয়ে রাখা হয়।
গায়ক নোবেলকে নিয়ে আলোচিত এই মামলার তদন্ত চলছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযোগের সত্যতা যাচাই ও প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে। তদন্তের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
Leave a comment