পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি শহরের ঐতিহাসিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি বিস্ফোরকভর্তি ভারতীয় ড্রোন হামলার ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলার সময় পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)–এর একটি ম্যাচ চলার কথা থাকলেও বিস্ফোরণের পর তাৎক্ষণিকভাবে পুরো আসর স্থগিত ঘোষণা করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় স্টেডিয়ামের সব কার্যক্রম।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানায়, ড্রোনটি ভারতের পাঞ্জাব এলাকা থেকে পাঠানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ড্রোনটি স্টেডিয়ামের কাছাকাছি একটি জায়গায় বিস্ফোরিত হয়, যার শব্দ কয়েক কিলোমিটার দূরেও শোনা যায়। সৌভাগ্যক্রমে এ ঘটনায় কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি, তবে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগে গ্যালারিতে থাকা কিছু দর্শক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
রাওয়ালপিন্ডি জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, “বিস্ফোরণের পরপরই পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে সেনা ও পুলিশ। বিস্ফোরণের উৎস, প্রকৃতি ও দায়ীদের শনাক্তে তদন্ত শুরু হয়েছে।” স্টেডিয়ামের আশপাশের এলাকা বর্তমানে ঘিরে রাখা হয়েছে এবং সাধারণ জনগণকে সেখানে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার পরপরই পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক জরুরি বিবৃতিতে জানায়, এই হামলাকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। পাকিস্তান সরকার আন্তর্জাতিক মহলে এই ঘটনা উত্থাপন করবে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করবে বলে জানানো হয়।
এদিকে পিসিবি চেয়ারম্যান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। যতক্ষণ না পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে, ততক্ষণ পিএসএলের ম্যাচগুলো স্থগিত থাকবে।” তিনি আরও জানান, বিদেশি খেলোয়াড়দেরও এই ঘটনার পর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যা টুর্নামেন্ট পরিচালনায় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। তবে কয়েক দিন ধরেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা বাড়ছিল, বিশেষ করে কাশ্মীর সীমান্ত ঘিরে। এমন পরিস্থিতিতে রাওয়ালপিন্ডিতে এই বিস্ফোরণ দুই দেশের সম্পর্কে আরও অবনতি ঘটাতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
আন্তর্জাতিক ক্রীড়ামহলও বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। নিরাপত্তার এমন চরম ঝুঁকির মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইসিসি) এক বিবৃতিতে জানায়, “আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।”
রাওয়ালপিন্ডি বিস্ফোরণ শুধু একটি খেলার আয়োজনকেই থামিয়ে দেয়নি, এটি দুই প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার নতুন মাত্রা তুলে ধরেছে। এখন দেখার বিষয়, পাকিস্তান ও আন্তর্জাতিক মহল কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করে।
Leave a comment