বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটের রাজনীতিতে বরাবরই রহস্য জিইয়ে রাখেন ।
কখন কি করেন সেটি বলা মুশকিল। তার দাবার ঘুঁটি থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রিও ঘুরে যায়। সাবেক মেয়র কামরান তখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ওই সময়ে তিনি নিজেকে নিয়ে বাজি ধরেন সিলেট সিটি নির্বাচনের ভোটের মাঠে। স্রোতের বিপরীতে থেকেও জয় ছিনিয়ে নেন। যদিও বলা হয়, আওয়ামী লীগের তৎকালীন মন্ত্রী পরিবারের ছায়া তার ওপর ছিল
বন্যায় সিলেটে পরিদর্শনে আসা তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরিফের প্রশংসা করে গিয়েছিলেন। সেই আরিফ ২০২৩ সালের মে মাসে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নিজেই রহস্যময় হয়ে উঠেছিলেন। কী করবেন তিনি। একদিকে জনপ্রিয়তা, অন্যদিকে দলের সিদ্ধান্ত। মেয়র প্রার্থী হবেন কি হবেন না, সে নিয়ে চারদিকে তুমুল আলোচনা। বিএনপি তাকিয়ে ছিল আরিফের সিদ্ধান্তের দিকে। অবশেষে আরিফ দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে ভোটের মাঠ থেকে সরে গেলেন। থেকে গেলে লাভবান হলেও হতে পারতেন।
আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বেশিদিন টিকেননি। গণ-অভ্যুত্থানের পর পালিয়েছেন দেশ ছেড়ে। জয় না পেলেও এখন তার সেই সুযোগ ছিল। সব কিছু বিসর্জন দিয়ে বিএনপি’রই হয়ে থাকলেন আরিফ। নিলেন না ঝুঁকি। সিলেটে সম্প্রীতির রাজনৈতিক পরম্পরায় সবসময় কেউ না কেউ জনগণের জন্য দুয়ার খোলা রাখেন। যেমনটি একসময় রেখেছিলেন বাবরুল হোসেন বাবুল, আফম কামাল ও সর্বশেষ বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। এমএ হকও ছিলেন সবার গ্রহণযোগ্য নেতা। বাবুল ছাড়া এখন কেউ বেঁচে নেই। অসুস্থতায় কাবু বাবুল এখন আমেরিকার বাসিন্দা।
ফলে ৫ই আগস্টের পর সিলেটে এখন যে একটি দুয়ার সবার জন্য উন্মুক্ত সেটি হচ্ছে আরিফুল হক চৌধুরীর বাসা। দলমত নির্বিশেষে সিলেটের মানুষ যেকোনো প্রয়োজনে তার কাছে ছুটে যান। পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা ব্যস্ত আরিফুল হক চৌধুরী। গোটা জেলার যখন যেখানে প্রয়োজন তিনি ছুটছেন। নিজের দল বিএনপি’র সব প্রয়োজনে থাকছেন অগ্রভাগে। জাতীয় নির্বাচন সামনে।
সিলেট বিএনপি’র নেতারা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই অবস্থায় এবার আরও রহস্যময় আরিফুল হক। অবারিত সুযোগ সামনে। কিন্তু পলিসির কথা বলছেন না। তার ভাষ্য, সময় এলেই জানতে পারবেন। সিলেট নগর নিয়ে ব্যস্ত এখন। নগরের সব প্রয়োজনে তিনি মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। প্রশাসন থেকে ডাক এলে সহযোগিতা করছেন। তবে সিটি নির্বাচনে ফের মেয়র প্রার্থী হবেন কিনা- সেটি এখনো পরিষ্কার করেননি।
বিএনপি’র বর্তমান পদবিধারী নেতারাও বসে নেই। অনেকেই চাচ্ছেন বিএনপি’র হয়ে মেয়র প্রার্থী হতে। এর মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সাবেক প্যানেল মেয়র ও নগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। এ ছাড়া আরও কয়েকজন নেতার নামও আলোচনায় রয়েছে। তারাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। সবার শঙ্কায় আরিফ। যদি তিনি প্রার্থী হন দল ও ভোটের মতামত তার পক্ষেই বেশি যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন নেতারা। এমপি হওয়ারও সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে আরিফুল হক চৌধুরীর সামনে। সিলেট-৪ আসনে ইতিমধ্যে তাকে নিয়ে তুমুল আলোচনা। গত ৭-৮ মাস ধরে ওই আসনে দলীয় অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়ে যাচ্ছেন আরিফ। তবে প্রার্থী হওয়া নিয়ে তার মুখবন্ধ।
হরিপুরে আলেম উলামাদের ক্ষোভকে প্রশমিত করতে তিনি উদ্যোগী হয়ে সালিশের মাধ্যমে ঘটনার নিষ্পত্তি ঘটান। এবার সেনাবাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় স্থানীয়রা তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিষয়টি সমাধানে আগ্রহ দেখাননি আরিফুল হক চৌধুরী। এ আসনের রাজনৈতিক নেতাদের মতে, আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হলে কোনো হিসেবই ধূপে টিকবে না। তার পক্ষে ইতিমধ্যে বিএনপি’র ঘরানার নেতাকর্মীরা একাট্টা। এ আসনে বিএনপি’র টিকিট চাইতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন নগর বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, বিএনপি থেকে পদত্যাগকারী কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান, জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি আব্দুল হেকিম চৌধুরী।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। এ আসনকে কেন্দ্র করে তিনি সিলেটের রাজনীতি করছেন। জেলা ও নগর বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে একাট্টা। ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন, এ আসনের দিকেও চোখ রয়েছে আরিফের।
আগামীতে কোথায় নোঙর ফেলবেন আরিফুল হক চৌধুরী সেই রহস্য তিনি এখনো খোলাসা করছেন না। জানালেন, সময় এলেই বোঝা যাবে। দল যেখানে ভালো মনে করবে, সেখানেই কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছেন তিনি।
Leave a comment