Home আন্তর্জাতিক ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ইলন মাস্কের এক্সের মামলা
আন্তর্জাতিক

ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ইলন মাস্কের এক্সের মামলা

Share
Share

ইলন মাস্কের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) ভারতের তথ্য নিয়ন্ত্রণ নীতির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক হাইকোর্টে এ মামলা দায়ের করা হয়। এক্স অভিযোগ করেছে, ভারত সরকার বেআইনিভাবে অনলাইন কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ করছে এবং ইচ্ছামতো ‘সেন্সরশিপ’ চালাচ্ছে।

ইলন মাস্কের সংস্থা এক্স সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক আলাপচারিতা টুল ‘গ্রোক ৩’ নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিষয়ে গ্রোক ৩ একাধিক বিতর্কিত উত্তর দিয়েছে, যা ভারতের প্রচারমাধ্যম ও সরকারের নজর কেড়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই এক্সের বিরুদ্ধে কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।
মামলায় এক্স দাবি করেছে, ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইন (আইটি অ্যাক্ট) বিশেষ করে ৭৯(৩)(বি) ধারা সুপ্রিম কোর্টের রায় লঙ্ঘন করছে। এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ব্যাহত করছে।

আইনের ৭৯(৩)(বি) ধারা অনুযায়ী, অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ‘সেফ হারবার প্রটেকশন’ পায়, যার ফলে ব্যবহারকারীদের পোস্ট করা কনটেন্টের জন্য তারা দায়ী থাকে না। তবে ভারত সরকার এই ধারা ব্যবহার করে কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ এক্সের।
এছাড়া, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯-এ ধারা অনুযায়ী, সরকার জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু এক্সের আইনজীবীরা বলছেন, ২০১৫ সালের শ্রেয়া সিংঘল মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল যে তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বিচারব্যবস্থার অনুমোদন প্রয়োজন। অথচ ভারত সরকার সেটি না করেই সরাসরি এক্সকে কনটেন্ট সরিয়ে ফেলতে বাধ্য করছে।
ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মতে, ৭৯(৩)(বি) ধারা অনুযায়ী, আদালতের নির্দেশ বা সরকারের নোটিশের ভিত্তিতে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে বেআইনি কনটেন্ট সরাতে হবে। যদি কোনো প্ল্যাটফর্ম ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে নির্দেশ মেনে না চলে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকার বলছে, এই ক্ষমতা তার রয়েছে, কিন্তু এক্সের দাবি, শুধুমাত্র আদালতের নির্দেশেই কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, সরকারের নয়। এখানেই প্রধান মতবিরোধ।

এক্সের আইনি চ্যালেঞ্জের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘সহযোগ’ পোর্টাল ও ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টার। এই সংস্থা ৭৯(৩)(বি) ধারার অধীনে সরাসরি এক্সকে কনটেন্ট সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিতে পারে।
এক্সের দাবি, এটি আসলে একটি ‘সেন্সরশিপ টুল’ যা সরকার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। এটি আইনানুগ পর্যালোচনা ছাড়াই কনটেন্ট অপসারণের জন্য প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
এক্সের আইনজীবীদের মতে, এটি বিচার বিভাগীয় তদারকি ছাড়াই অনলাইন বক্তৃতা নিয়ন্ত্রণের আরেকটি প্রচেষ্টা।
কর্নাটক হাইকোর্টে মামলার পরবর্তী শুনানি ২৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। মামলার রায় ভারতে অনলাইন কনটেন্ট সেন্সরশিপ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

গাজায় ধ্বংসের মহামারি: আরব বিশ্ব কেন নীরব?

গাজায় এখন কেবল আগুনের লেলিহান শিখা, ধ্বংসস্তূপ আর আর্তনাদের প্রতিধ্বনি। প্রতিদিন হাজার হাজার বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত হচ্ছে শহর, ঝরছে নিরীহ প্রাণ। শিশুদের খেলার...

শরীয়তপুরে পারিবারিক কলহের জেরে বাবাকে হত্যা, পালানোর সময় ছেলের মৃত্যু

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় এক মর্মান্তিক পারিবারিক সংঘর্ষের ঘটনায় ছেলের হাতে বাবা খুন হয়েছেন, আর পালানোর সময় মাঠে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন সেই ছেলে। রবিবার...

Related Articles

মাস্কের ট্রান্সজেন্ডার মেয়ে ‘ভিভিয়ান’ যুক্তরাষ্ট্র ছাড়লেন

ইলন মাস্কের ট্রান্সজেন্ডার মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর দেশটিতে...

গাজায় জিম্মি দুই ইসরায়েলির ভিডিও প্রকাশ

উপত্যকার শাসক দল “হামাস” গাজায় জিম্মি দুই ইসরায়েলি বন্দির ভিডিও প্রকাশ করেছে...

যুক্তরাষ্ট্রের গোপন যুদ্ধ পরিকল্পনা ফাঁস

সিগন্যালের গ্রুপ চ্যাটে সামরিক অভিযান নিয়ে আলোচনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সদস্যরা।...

ইসরাইলি হামলায় আলজাজিরার সংবাদিক নিহত

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় একের পর এক ইসরাইলি হামলায় গত কয়েকদিনে নিহত হয়েছেন...