বাংলাদেশের জলজ সম্পদ শুধু মাছ আহরণ বা রপ্তানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মাছের শরীরের এমন এক মূল্যবান অংশ রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার চেয়েও দামি। প্রতি কেজি কোটি টাকায় বিক্রি হওয়া এই অংশটির নাম পিটুইটারী গ্লান্ড। বিশেষ করে কার্প (Carp) ও ক্যাটফিশ (Catfish) জাতীয় মাছের মস্তিষ্কের নিচে থাকা এই ছোট্ট গ্রন্থিটি মাছের প্রজনন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশ্বব্যাপী ফিশ হ্যাচারিতে Induced Breeding-এর জন্য এই গ্লান্ড অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি মাছের প্রজননক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে, ফলে মাছের বংশবৃদ্ধি দ্রুত হয়। শুধু তাই নয়, ফার্মাসিউটিক্যাল ও বায়োটেক গবেষণায়ও এই গ্লান্ড ব্যবহৃত হয়, যা এর চাহিদাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে পিটুইটারী গ্লান্ডের দাম প্রতি কেজি ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৬ থেকে ৬৫ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে বিশ্ববাজারে এই গ্লান্ডের চাহিদা ছিল প্রায় ১০০ টন, যার বাজার মূল্য ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রচুর কার্প ও ক্যাটফিশ উৎপাদন হয়, ফলে এই গ্লান্ড রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭.৫ টন গ্লান্ড রপ্তানি হয়েছে, যার মূল্য ছিল ২৭ মিলিয়ন ডলার। সরকার যদি পরিকল্পিতভাবে এই শিল্পের বিকাশ ঘটায়, তবে প্রতিবছর ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করা সম্ভব।
তবে রপ্তানির জন্য কিছু বিষয় জানতে হবে। কোন মাছের গ্লান্ডের চাহিদা বেশি, কীভাবে এটি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয়, রপ্তানির বৈধতা ও লাইসেন্স পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। সঠিক বাজার গবেষণা ও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই মূল্যবান সম্পদের বিশ্ববাজারের অন্যতম শীর্ষ সরবরাহকারী হতে পারে। পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে পিটুইটারী গ্লান্ড রপ্তানি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে।
Leave a comment