Home জাতীয় শেখ হাসিনাকে ড. কামালের ১২ পৃষ্ঠার চিঠি
জাতীয়

শেখ হাসিনাকে ড. কামালের ১২ পৃষ্ঠার চিঠি

Share
Share

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অপ্রত্যাশিত পরাজয় ঘটে। দলটির নেতা-কর্মীরা ভাবতেই পারেননি যে, বিএনপি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে। ভোটের পর অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নেতাদের অত্যধিক আত্মবিশ্বাস, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অভাব ও তৃণমূল কর্মীদের অবমূল্যায়নসহ নানা বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়।
এই প্রেক্ষাপটে ১২ ও ১৩ মার্চ আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে ১২ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লেখেন দলের তৎকালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. কামাল হোসেন। চিঠিতে তিনি দলের পরাজয়ের কারণগুলো বিশ্লেষণ করেন। তবে শেখ হাসিনা চিঠিটিকে ভালোভাবে না নিয়ে একে ‘দল ভাঙার ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখেন। এরপর থেকেই তাঁর সঙ্গে কামাল হোসেনের দূরত্ব তৈরি হয়।

’৯১-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেছিলেন, দীর্ঘ সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগ ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবে। কিন্তু ফলাফল ছিল উল্টো। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি বিজয়ী হয় এবং সরকার গঠন করে।
এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, ভোটের আগেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। তবে বাস্তবে বিএনপি ৩০.৮১% ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়, আর আওয়ামী লীগ পায় ৩০.০৮% ভোট। দুই দলের মধ্যে ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র এক শতাংশেরও কম।

শেখ হাসিনাকে ড. কামালের চিঠি
ভোটে পরাজয়ের পর ৩ মার্চ শেখ হাসিনা দলীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছে পদত্যাগপত্র দেন। তবে দলীয় নেতা-কর্মীদের চাপের মুখে ৫ মার্চ তিনি তা প্রত্যাহার করেন। পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ড. কামাল হোসেন ১২ পৃষ্ঠার চিঠিতে উল্লেখ করেন, নেতাদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, দলীয় কোন্দল, আত্মম্ভরিতা, তৃণমূল কর্মীদের উপেক্ষা, ভোটের দিন সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকা।
চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীরা নিশ্চিত বিজয়ের গর্বে এতটাই মাতোয়ারা হয়ে গিয়েছিল যে, ভোটের দিনও স্ব স্ব কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন না করে অন্যান্য কেন্দ্রে গিয়ে মাতব্বরি করছিল।’
ড. কামাল আরও বলেন, বিএনপি ও জামায়াতসহ অন্যান্য দল ভোটের ফল নিজেদের অনুকূলে আনতে মরিয়া হয়ে কাজ করেছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা দায়িত্বহীনভাবে আচরণ করেছেন।

দলীয় কোন্দল ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব
চিঠিতে ড. কামাল উল্লেখ করেন, জামালপুরে মেজর জেনারেল (অব.) খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজেই প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন। একইভাবে, ত্যাগী নেত্রী জোহরা তাজউদ্দীনও অভ্যন্তরীণ বিরোধিতার শিকার হন।
নেত্রকোনার ফজলুর রহমান খান, চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর নূরুল ইসলাম বিএসসি, চন্দনাইশের জাফর আহমদ চৌধুরীসহ দেশের বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা উপদলীয় কোন্দলের কারণে হেরে যান।

শেখ হাসিনার ‘সূক্ষ্ম কারচুপি’ তত্ত্ব ও ড. কামালের বিপরীত মত
ভোটে পরাজয়ের পর শেখ হাসিনা দাবি করেন, নির্বাচনে ‘সূক্ষ্ম কারচুপি’ হয়েছে। কিন্তু ড. কামাল হোসেন এই দাবির বিরোধিতা করে বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু হয়েছে।’
এরপরই তিনি দলের নেতা-কর্মীদের রোষানলে পড়েন। তাঁর গাড়িতে হামলা হয়, এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে।

ড. কামালের দলত্যাগ ও গণফোরামের আত্মপ্রকাশ
১৯৯২ সালে শেখ হাসিনা একটি চিঠিতে অভিযোগ করেন, ‘একটি মুখোশধারী চক্র দলে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে।’ চিঠিতে কারও নাম উল্লেখ না করা হলেও নেতা-কর্মীরা বুঝে যান যে, ইঙ্গিত করা হয়েছে ড. কামাল হোসেনকে।
১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট তিনি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ‘গণফোরাম’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।

বর্তমান প্রেক্ষাপট
বিগত তিন দশকে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গণফোরাম এখনো রাজনীতির ময়দানে টিকে আছে। ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর দলটির দুটি গ্রুপ এক হয়ে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে। বর্তমানে ৮৮ বছর বয়সী ড. কামাল হোসেন ‘ইমেরিটাস সভাপতি’ হিসেবে দলটির নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রেখে চলেছেন।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

পুরোনো বিমানবন্দরে ‘এয়ার শো’ দেখতে মানুষের ঢল

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে আয়োজিত বিশেষ ‘এয়ার শো’ দেখতে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে। উৎসবমুখর পরিবেশে...

বিজয় দিবসকে ঘিরে দেশজুড়ে র‌্যাবের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তুতি

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, জনসমাগমস্থল এবং বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত...

Related Articles

সিলেটে তরুণদের বিদেশমুখিতা বাড়ছে, কারণ ….

সিলেটকে বলা হয় ‘দ্বিতীয় লন্ডন’। যুক্তরাজ্যে সিলেটি প্রবাসীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির কারণে এই...

ওবায়দুল কাদের ও সাদ্দামসহ ৭ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

জুলাই–আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দমনে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী...

হাদি হত্যাচেষ্টা মামলায় শুটার ফয়সালের বাবা–মায়ের চাঞ্চল্যকর জবানবন্দি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় নতুন...

পরবর্তী টার্গেট হাসনাত আব্দুল্লাহ ? ভারতীয় সাবেক কর্ণেলের পোস্ট ঘিরে উদ্বেগ

হাদির ওপর হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার টার্গেট করা হয়েছে হাসনাত...