বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পাট শিল্প আজ আর শুধুই অতীতের গল্প নয়। ‘সোনালী আঁশ’ খ্যাত পাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে আবারও যোগ হচ্ছে নতুন গতি। ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যখন উদযাপন চলছে, তখনই ভেসে আসছে এক সুসংবাদ—পাট এবং পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বাড়ছে, স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে এবং পরিবেশবান্ধব শিল্প গড়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাট শিল্প এখন বৈশ্বিক বাজারে টেকসই পণ্যের বড় অংশীদার হতে পারে। বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক বর্জনের যে আন্দোলন, সেখানে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য হচ্ছে কার্যকর বিকল্প। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে বর্তমানে পাটের ব্যাগ, পাটের রপ্তানি উপকরণ এবং ঘর সাজানোর পণ্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) এর সাম্প্রতিক তথ্যমতে, ২০২৪ অর্থবছরে পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৮% বেশি। সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগে পাট শিল্পে আধুনিকায়ন, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নতুন ডিজাইনের পণ্যের সংযোজনই এই সফলতার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে।
বাংলাদেশের বহু কৃষক এখন আবার পাটচাষে আগ্রহী হচ্ছেন। উচ্চমূল্য নিশ্চিত হওয়ায় এবং সরকারি সহায়তায় পাটচাষ লাভজনক হয়ে উঠছে। ২০২৫ সাল নাগাদ দেশের পাটচাষ এলাকা ১৫% বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় পাটের অবদানও কম নয়। পাট প্রাকৃতিকভাবে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় থাকে পরিবেশবান্ধব। জাতীয় পাট দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সবুজ বিশ্বে পাটের সমৃদ্ধি’ যথার্থই তুলে ধরে পাটের ভূমিকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রপ্তানির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে। যেমন—শপিং ব্যাগ, অফিস ফাইল, স্কুল সামগ্রী, প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রি এবং নির্মাণ খাতেও পাটের ব্যবহার বাড়ানোর বিশাল সুযোগ রয়েছে।
জাতীয় পাট দিবসে দেশের সরকার, উদ্যোক্তা, কৃষক এবং গবেষকদের একটাই লক্ষ্য—পাটকে ঘিরে বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন অধ্যায় রচনা করা।
বাংলাদেশের পাটশিল্প আবারও প্রমাণ করছে, সঠিক পরিকল্পনা ও যুগোপযোগী উদ্যোগ নিলে ঐতিহ্যও হতে পারে টেকসই উন্নয়নের হাতিয়ার। জাতীয় পাট দিবসে সেই স্বপ্ন আরও সুদৃঢ় হলো—পাটই পারে দেশের অর্থনীতিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিতে।
Leave a comment