Home জাতীয় সহস্রাধিক সিরীয় মারা গেছে আসাদের নির্মম এক বন্দিশালায়
জাতীয়

সহস্রাধিক সিরীয় মারা গেছে আসাদের নির্মম এক বন্দিশালায়

Share
Share

ক্ষমতাচ্যুত সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এর শাসনামলে রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে একটি গোপন কারাগারে এক হাজারেরও বেশি সিরীয় বন্দি নিহত হয়েছেন। এই বন্দিশালায় বন্দিদের ওপর চালানো হয় অত্যাচার, নির্যাতন, এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রয়টার্স বার্তা সংস্থার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আসাদের শাসনের সময় দামেস্কের উপকণ্ঠে একটি সামরিক বিমানবন্দর এলাকায় এক কারাগারে নিহতদের সংখ্যা এক হাজারের বেশি। মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল ফাঁসি, নির্যাতন, এবং শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার। সেখানে সাতটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই গণকবরগুলির অবস্থান চিহ্নিত করেছে সিরিয়া জাস্টিস অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি সেন্টার (এসজেএসি), যাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা বিভিন্ন সাক্ষ্য, স্যাটেলাইট ছবি এবং সামরিক বিমানবন্দরের নথিপত্রের মাধ্যমে এসব কবরের অবস্থান চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে।
কিছু গণকবর বিমানবন্দরের মাঠে এবং দামেস্কজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। যদিও রয়টার্স প্রতিবেদনে এই কবরগুলির অস্তিত্ব নিশ্চিত করেনি, তবে এসজেএসি কর্তৃক চিহ্নিত বেশ কিছু স্থানে মাটি নড়াচড়ার লক্ষণ পাওয়া গেছে, যা সাক্ষী এবং স্যাটেলাইট ইমেজের সঙ্গে মিলে যায়। মেজেহ বিমানবন্দরের এবং নাজহার কবরস্থানের আশপাশে খাদের স্পষ্ট চিহ্ন দেখা গেছে, যা নির্যাতনের স্বাক্ষীর বর্ণনার সঙ্গে মেলে।
শাদি হারুন, একজন প্রতিবেদক, যিনি নিজে একসময় বন্দি ছিলেন, জানান যে ২০১১-১২ সালে সিরিয়ায় বিক্ষোভে অংশগ্রহণের জন্য তাকে আটক করা হয় এবং তখন তাকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের মুখে পড়তে হয়েছিল। তিনি বলেন, “প্রতিদিন স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন করা হত, বন্দিরা সেলের দেয়াল বা জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ ছাড়া কিছুই দেখতেন না, তবে মাঝে মাঝে গুলির শব্দ শুনতে পেতেন। প্রায় প্রতি দুই দিন পরেই কেউ গুলিবিদ্ধ হত এবং তারপর মারধরের শিকার হত।”
তিনি আরও বলেন, “একবার একটি বন্দির পায়ে চাবুকের আঘাতে ক্ষত তৈরি হয় এবং সেটি জীবাণুমুক্ত না করার কারণে ধীরে ধীরে গ্যাংগ্রিন হয়ে যায়, শেষে তার পা কেটে ফেলতে হয়।”
এসজেএসি এবং সেদনায়া কারাগারের বন্দি এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন ১৫৬ জন জীবিত বন্দি ও বিমান বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার আটজন সাবেক সদস্যের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এই সংগঠনগুলোও গণকবরের অবস্থান চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে।
নতুন সিরীয় সরকার একটি ডিক্রি জারি করেছে, যেখানে সাবেক সরকারের কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে কথা বলার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে, নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্নেল, যিনি ছদ্মনামে আবু বকর হিসেবে পরিচিত, বলেন, “যদিও কিছু কবর আগে পাওয়া যায়নি, তবে এটি আমাদের জন্য অবাক করা কিছু নয়, কারণ আমরা জানি যে আসাদের কারাগারে এক লাখেরও বেশি নিখোঁজ ব্যক্তি রয়েছে।”
এই ঘটনার পেছনে আসাদের শাসনের নির্মমতা এবং সিরিয়ার জনগণের ওপর অত্যাচারের চিত্র আরও একবার উন্মোচিত হয়েছে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

কামরাঙ্গীরচরে মেলার মাঠ নিয়ে সংঘর্ষ: বোমাবাজি, ভাঙচুর, গ্রেপ্তার ১৩

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মেলার মাঠ বরাদ্দকে কেন্দ্র করে বোমাবাজি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিএনপির এক নেতার অনুসারী ১৩ জনকে...

রাজনৈতিক দলে ‘ক্রাউডফান্ডিং’: কীভাবে কাজ করে এবং এর স্বচ্ছতা কতটা জরুরি?

নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দলীয় তহবিল গঠনের জন্য ‘ক্রাউডফান্ডিং’ ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছে। গত ৮ মার্চ এক সংবাদ...

Related Articles

গ্রেপ্তারের পর ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি, সন্ধ্যায় মৃত্যু

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় মোহাম্মদপুরে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার...

ময়মনসিংহে ড্রেজার দিয়ে মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এল রাইফেলের বুলেট

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় একটি পুকুর খননের সময় ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি সরানোর...

মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়েই তৈরি করতে হবে – নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বর্তমান সরকারের সময়েই মৌলিক...

রাজশাহীতে ৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইয়াবাসহ আটক

চার বছরের সাজা মাথায় নিয়ে পলাতক থাকার পর আবারও ইয়াবাসহ আটক হলেন...