রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে উত্তরা ও টঙ্গীতে সংঘটিত দুই ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে এবং দুই ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য বলছে, গত ছয় মাসে গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন ১২১ জন।
উত্তরার হাউসবিল্ডিং এলাকার বিএনএস সেন্টারের সামনে রাত ১০টার দিকে দুই ব্যক্তিকে ছিনতাইকারী সন্দেহে স্থানীয় জনতা পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে তাঁদের পায়ে দড়ি বেঁধে পদচারী সেতুর সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। আহতদের নাম মো. নাজিম (৪০) ও মো. বকুল (৩০)। টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তাঁর নাম-পরিচয় এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
গণপিটুনির ভয়াবহতা ও আইনের অবস্থান
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গণপিটুনিতে ১২১ জন নিহত হয়েছেন। ২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা ছিল ১৪৬, যা ২০২৩ সালের ৫১ জনের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। আইনজীবীরা বলছেন, গণপিটুনি সরাসরি হত্যাকাণ্ডের শামিল এবং এতে জড়িত ব্যক্তিদের আইন অনুযায়ী হত্যাকারী হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘গণপিটুনির ঘটনা বাড়লেও সরকার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন যথাযথভাবে কাজ করলে এমন ঘটনা রোধ করা সম্ভব।’
মানুষ কেন আইন হাতে তুলে নিচ্ছে?
বিশ্লেষকদের মতে, অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় মানুষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকারিতার ওপর আস্থা হারাচ্ছে। ছয় মাসে ডাকাতি ও ছিনতাই-সংক্রান্ত মামলা ৫০ শতাংশ বেড়েছে, যা মানুষের মধ্যে আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। তবে আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, কিন্তু আইন হাতে তুলে নেওয়া কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়।
সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, গণপিটুনির পেছনে তিনটি বড় কারণ রয়েছে—পরিকল্পিত উসকানি, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও সরকারের উদাসীনতা। বিশ্লেষকদের মতে, যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হয় এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করা হয়, তবে এ ধরনের সহিংসতা আরও বাড়তে পারে।
Leave a comment