বাংলাদেশের দুটি পাঠ্যবই ও ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মানচিত্রে চীন ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বেইজিং। চীনের দাবি, সেখানে অরুণাচল প্রদেশ ও আকসাই চীনকে ভারতের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা তাদের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। একইসঙ্গে, হংকং ও তাইওয়ানকে পৃথক দেশ হিসেবে উল্লেখ করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে দেশটি।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীন বাংলাদেশ সরকারকে একটি চিঠির মাধ্যমে এই বিষয়গুলো সংশোধনের অনুরোধ জানায়। এরপর দুই দেশের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কাছে পাঠালে জানানো হয়, নতুন পাঠ্যবই ইতোমধ্যে ছাপানো হয়ে গেছে, ফলে তাৎক্ষণিক সংশোধন করা সম্ভব নয়। এরপর বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে চীনকে অনুরোধ করে, আপাতত এ নিয়ে চাপ না দিতে এবং ভবিষ্যতে সমন্বিতভাবে বিষয়টি পর্যালোচনা করার আশ্বাস দেয়।
বেইজিংয়ের বক্তব্য, অরুণাচল প্রদেশ ও আকসাই চীন চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এই ভূখণ্ড নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়। চীনের ভাষ্য অনুযায়ী, সীমান্তরেখা প্রতিটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হলে আন্তর্জাতিকভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে।
তাইওয়ান ও হংকং প্রসঙ্গে চীন জানিয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘এক চীন নীতি’র ভিত্তিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশই চীনকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তাইওয়ানকে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা চীনের নীতির বিরোধী। হংকংও ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে চীনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং ‘এক রাষ্ট্র, দুই ব্যবস্থা’ নীতির আওতায় বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধের জেরে মানচিত্র সংশোধনের বিষয়ে চীন নতুন করে কৌশল গ্রহণ করছে এবং বাংলাদেশের ওপরও এর প্রভাব পড়ছে। এর আগে বাংলাদেশে প্রকাশিত মানচিত্র নিয়ে চীন কোনো আপত্তি জানায়নি, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এখন এই বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে বেইজিং।
বাংলাদেশ সাধারণত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণ করেই মানচিত্র প্রকাশ করে থাকে। তাই হুট করে পরিবর্তন আনা কঠিন। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সামলাতে পারে, যাতে দেশটির সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা বজায় থাকে, আবার চীনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কও অব্যাহত থাকে।
চীন আশা প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশ তাদের উদ্বেগকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে এবং ভবিষ্যতে পাঠ্যবই ও সরকারি নথিতে মানচিত্র সংক্রান্ত ভুল সংশোধনের পদক্ষেপ নেবে। তবে বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিকদের মতে, এটি চীন ও ভারতের মধ্যকার বিরোধের একটি অংশ, যেখানে বাংলাদেশকে সতর্কতার সঙ্গে কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
Leave a comment