বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের পতনের মধ্য দিয়ে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন থেকে সৃষ্ট রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের ফলে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ এখন গভীর সংকটে। এক সময়ের শক্তিশালী রাজনৈতিক দলটি আজ তৃণমূল থেকে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত বিভক্ত এবং জনসমর্থন পুনর্গঠনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে।
গণভবন থেকে শেখ হাসিনার নাটকীয় প্রস্থানের মাধ্যমে তার ১৬ বছরের শাসনের ইতি ঘটে। এর আগে ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু দলীয় নেতৃত্বের উদাসীনতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। অভ্যুত্থানের সময় দলের অনেক নেতার মনোভাব, মাঠপর্যায়ের সমস্যা উপেক্ষা এবং নেত্রীপ্রীতি-নির্ভর রাজনীতি দলটিকে জনবিচ্ছিন্ন করে তোলে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে শীর্ষ নেতৃত্ব গোয়েন্দা তথ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল এবং স্থানীয় নেতাদের দমন-পীড়নের কারণে দল সাংগঠনিক শক্তি হারিয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা হলে, দলের প্রভাবশালী অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যান। মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা নিজ দল থেকেই অবহেলার শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। তারা অভিযোগ করেন, দলটি ক্ষমতায় থাকাকালীন সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং দমন-পীড়ন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তাকে ধ্বংস করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবনের জন্য চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে: ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের জন্য ক্ষমা চাওয়া, বর্তমান আদর্শ পরিবর্তন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নেতৃত্ব থেকে দূরে রাখা এবং দলের জঘন্য অপরাধের জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা।
এদিকে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দমননীতির জন্য জনগণের আস্থা হারালেও, অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে শেখ হাসিনার প্রতি এখনও সমর্থন রয়েছে। তবে বিদেশে অবস্থানরত সিনিয়র নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দল পুনর্গঠনের চেষ্টা করলেও, মাঠপর্যায়ের নেতাদের আতঙ্ক ও বিচ্ছিন্নতা দলকে পুনর্গঠনে বাধা দিচ্ছে।
দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব, দীর্ঘদিন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে সংগঠন পরিচালনা, এবং জনগণের ক্ষোভ উপেক্ষা করার প্রবণতা দলকে আজ গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়েছে। জনআস্থা পুনরুদ্ধার এবং নেতৃত্বের পুনর্গঠনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, তা নির্ভর করছে ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত এবং দৃষ্টিভঙ্গির ওপর।
Leave a comment