মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি মংডু শহরটি দখল করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমানার প্রায় ৩০০ কিলোমিটার এলাকা বর্তমানে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মিয়ানমারের গণমাধ্যম জানিয়েছে।
আরাকান আর্মির মুখপাত্র ইউ খাইং থু খা বিবিসি বার্মিজ সার্ভিসকে জানিয়েছেন, তারা পশ্চিমাঞ্চলীয় জান্তা বাহিনীর কমান্ড হেডকোয়ার্টারসহ পুরো রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
এ অঞ্চলের পুরোপুরি দখল নেওয়ার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদীর মিয়ানমার অংশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আরাকান আর্মি। তাদের এই ঘোষণার পর নাফ নদীতে নৌ চলাচলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে, এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করা হচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বিবিসি বাংলাকে জানান, যেহেতু সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মি বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, তাই বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে যাতে কোনো অবৈধ অনুপ্রবেশ না ঘটে।
রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) জান্তা বাহিনীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, যার ফলে এই অঞ্চলের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণের পর রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম জানান, এতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আরো জটিল এবং কঠিন হয়ে পড়বে।
চলমান যুদ্ধের মধ্যে আরাকান আর্মি মংডু, বুথিডং, এবং পালেতাওয়া সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা জান্তার সকল সীমান্ত চৌকি দখল করে ফেলেছে। ৭ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, রাখাইনের আন অঞ্চলে ৩০টিরও বেশি জান্তা বাহিনীর ক্যাম্প তারা দখল করেছে এবং প্রতিরোধে জান্তার বিমান ও হামলা প্রতিহত করে পাল্টা হামলা চালিয়েছে।
আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, ২৮ নভেম্বর তাদের একটি আক্রমণে মাগোয়ে অঞ্চলের সামরিক বাহিনীর একটি বহরে হামলা চলাকালে ১০০ সেনা নিহত হয়েছে। তাদের সহযোগী স্টুডেন্ট আর্মি ফোর্স (এসএএফ) জানায়, সামরিক বাহিনীর রসদ সরবরাহ কেন্দ্রেও যুদ্ধ চলছে। তবে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
আরাকান আর্মির দাবি, তারা মংডু শহরের বাইরের একটি সীমান্ত পুলিশ ফাঁড়ি দখল করেছে। জান্তার বাহিনীর একটি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও আটক হয়েছে, যিনি রাখাইনে ১৫ নং অপারেশন কম্যান্ডের অধিনায়ক ছিলেন।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে চলমান যুদ্ধের মধ্যে, আরাকান আর্মি ২০২৩ সালের শুরুর দিকে সীমান্তের কিছু এলাকাও দখল করেছিল। তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে, কিছু মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেন, পরে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। সম্প্রতি মংডু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর, নাফ নদীর মিয়ানমার অংশে নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আরাকান আর্মি।
তারা জানিয়েছে, তাদের হামলার ফলে এলাকাটি সেনা বাহিনী, আরএসও, আরসা, এবং এআরএ সদস্যদের থেকে খালি হয়ে যাচ্ছে এবং তারা ওই অঞ্চল থেকে পালাচ্ছে।
Leave a comment