বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের আগে তাঁর বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান জনরোষ সম্পর্কে ভারত অবগত ছিল, তবে দেশটির রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের মতো পরিস্থিতি ভারতের ছিল না বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
শনিবার নয়াদিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক পরামর্শক কমিটির এক বৈঠকে জয়শঙ্কর সংসদ সদস্যদের জানান, শেখ হাসিনার ওপর ভারতের উল্লেখযোগ্য প্রভাব না থাকায় তাঁকে কেবল পরামর্শ দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল ভারতের ভূমিকা।
ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানিয়েছে, অন্যান্য বৈশ্বিক অংশীদারের মতো ভারতও জানত যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছিল। এ প্রসঙ্গে জয়শঙ্কর জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্কের মন্তব্যের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে বলা হয়েছিল, হাসিনাবিরোধী বিক্ষোভের সময় নিরস্ত্র জনতার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনার জন্য আয়োজিত বৈঠকে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
দ্য হিন্দু আরও জানায়, শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দেওয়ায় দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে কিছুটা উত্তেজনা বিরাজ করছে, যদিও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
এদিকে পিটিআই জানিয়েছে, জয়শঙ্কর সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বলেছেন, আগামী ২ থেকে ৪ এপ্রিল ব্যাংককে অনুষ্ঠিতব্য বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের অনুরোধ বিবেচনাধীন রয়েছে।
সূত্র বলছে, নরেন্দ্র মোদি বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে পারেন, তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময়ও ইউনূস-মোদি বৈঠকের অনুরোধ জানানো হয়েছিল, তবে সেটি বাস্তবায়িত হয়নি।
বৈঠকে কয়েকজন সংসদ সদস্য বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ভারত সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে জয়শঙ্কর জানান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দাবি করেছে যে হামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ধর্মীয় কারণে নয়।
তিনি আরও বলেন, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং এই বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেন, পাকিস্তানের অনাগ্রহের কারণে সার্ক কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তাই ভারত বিমসটেককে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
তিনি জানান, ভবিষ্যতে পাকিস্তান ও চীন প্রসঙ্গে আরও বিস্তারিত আলোচনা করবেন।
Leave a comment