সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) চাকরিচ্যুত শিক্ষক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুর রহমান রনিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিঞা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, শুক্রবার রাতে সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক টাউন মহল্লা থেকে রনিকে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
গ্রেফতারকৃত মাহমুদুর রহমান রনি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার হারুয়া গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ শাখার সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। তবে তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ ওঠায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় তাকে চাকরিচ্যুত করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম।
মাহমুদুর রহমান রনির বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। একাধিক ছাত্রীকে অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেওয়া, যৌন নিপীড়ন, প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষক নিয়োগে ভূমিকা রাখা, এমনকি একজন শিক্ষার্থীকে জোর করে গর্ভপাত করানোর মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
২০২২ সালে এক শিক্ষিকার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে। তখন অভিযোগ ওঠে, ঐ শিক্ষিকা রনির প্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন। এই ঘটনাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করে। অভিযোগ ওঠার পর থেকেই শিক্ষার্থী-শিক্ষক সমাজে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযোগগুলো তদন্তের পর শেষ পর্যন্ত তাকে চাকরিচ্যুত করে।
রনির নাম নতুন করে আলোচনায় আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। সেই আন্দোলনের সময় ঘটে যাওয়া সহিংসতায় দায়ের করা মামলায় তাকে আসামি করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তের অংশ হিসেবে এবং মামলার অগ্রগতি নিশ্চিত করতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ওসি জুয়েল মিঞা বলেন, “মাহমুদুর রহমান রনি দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য আসার পর শুক্রবার রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে সাভারের ব্যাংক টাউন থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, রনির বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠেছিল তা ছাত্র-শিক্ষক মহলে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত ও পর্যালোচনার পর তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়। এখন তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়ায় ক্যাম্পাসে আবারও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “একজন শিক্ষকের এমন কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এখন যেহেতু তিনি হত্যার মতো গুরুতর মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন, আমরা চাই আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার হোক।”
গ্রেফতারের পর রনিকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করতে পারে পুলিশ, যাতে হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মনে করছে, রনির বিরুদ্ধে এতদিন যেসব গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল, এবার তার আইনি পরিণতি সামনে আসতে পারে।
Leave a comment