চলতি বছরের হজ নিবন্ধনের সময়সীমা আজ (১২ অক্টোবর) শেষ হচ্ছে। তবে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় বাংলাদেশের হজ কোটার একটি বড় অংশ খালি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (১১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় মাত্র ২ হাজার ৯১২ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৯ হাজার ১০৫ জনসহ মোট ২২ হাজার ১৭ জন নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। অথচ এ বছর সৌদি সরকারের বরাদ্দ অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট হজ কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন।
নিবন্ধনে অনীহা ও কোটা খালি থাকার শঙ্কা-
সৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০২৬ সালের হজযাত্রী নিবন্ধনের শেষ দিন আজ রবিবার। নির্ধারিত সময় শেষ হলেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় নিবন্ধনের হার আশানুরূপ নয়। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হজ এজেন্সিগুলোকে তাগিদ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
হজ কার্যক্রমে জড়িত ব্যাংকগুলো শনিবারও খোলা রাখা হয়, যাতে আগ্রহী হজযাত্রীরা শেষ মুহূর্তে নিবন্ধনের সুযোগ পান। তবুও সংখ্যাগত দিক থেকে নিবন্ধনের গতি সন্তোষজনক নয় বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এজেন্সিগুলোর উদাসীনতা নিয়ে কঠোর অবস্থান-
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে হজ এজেন্সিগুলোর কাছে পাঠানো এক তাগিদপত্রে জানানো হয়, সৌদি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নিবন্ধনের সময়সীমা আজ শেষ হবে। অথচ তালিকাভুক্ত ৩২৯টি এজেন্সি এখনো কোনো হজযাত্রী নিবন্ধন করেনি।
২০২৬ সালের হজ প্যাকেজ ও গাইডলাইন অনুযায়ী, প্রতিটি এজেন্সিকে ন্যূনতম ৪৬ জন হজযাত্রী নিবন্ধন করতে হবে। কোনো এজেন্সি যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এই শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছে মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ৪৮টি এজেন্সি এখনো প্রাক-নিবন্ধন ও প্রাথমিক নিবন্ধনও সম্পন্ন করেনি বলে জানা গেছে, যাদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘ওমরাহর পর হজে অনাগ্রহ’—হাবের বিশ্লেষণ
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই ওমরাহ পালন করেছেন, ফলে হজে অংশগ্রহণে আগ্রহ কিছুটা কমে গেছে। “অনেকে ভুলভাবে মনে করেন, ওমরাহ পালন করলেই হজের কর্তব্য পূর্ণ হয়—এই ভুল ধারণাও সাড়া কমার একটি কারণ,” বলেন তিনি।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, শেষ মুহূর্তে নিবন্ধনের সংখ্যা কিছুটা বাড়বে। “এবার প্রক্রিয়াটি তুলনামূলকভাবে আগেভাগে শুরু হওয়ায় অনেকেই বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেননি।
মন্ত্রণালয়ের প্রত্যাশা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা-
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিবন্ধন সময়সীমা শেষ হলেও সৌদি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনে সময়সীমা কিছুটা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে অংশগ্রহণের হার ও সৌদি আরবের অনুমোদনের ওপর।
মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চাই, বাংলাদেশের পূর্ণ কোটা ব্যবহৃত হোক। কারণ হজের সুযোগ সীমিত, আর অংশগ্রহণ কম হলে ভবিষ্যতে কোটার পরিমাণেও প্রভাব পড়তে পারে।”
হজের তারিখ ও প্রস্তুতি-
সৌদি আরবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ২৬ মে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিবন্ধন সম্পন্ন হলে পরবর্তী ধাপে শুরু হবে প্রশিক্ষণ, ভিসা প্রক্রিয়া এবং ফ্লাইট সূচি নির্ধারণ। ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার হজ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার আরও বাড়ানো হয়েছে, যাতে যাত্রীদের তথ্য, আবাসন ও যাতায়াত সেবা সহজতর করা যায়।
হজযাত্রীদের মধ্যে অনেকে জানিয়েছেন, ব্যয় বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা হজে অংশ নেওয়ার আগ্রহে প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়া প্রবাসী পরিবারগুলোর অনেকে ওমরাহ করে ফেলায় নিবন্ধনের সময়সীমা শেষের দিকে এসে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় আশা করছে, শেষ ঘণ্টাগুলোতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া কিছুটা গতিশীল হবে এবং কোটা পূরণে ঘাটতি কিছুটা পুষিয়ে উঠবে।
Leave a comment