ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় মৃত্যুর সাত বছর পর কবর থেকে নারীর মরদেহ উত্তোলন করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সকালে আদালতের নির্দেশে সুলতানা রাজিয়া ওরফে মুক্তা বেগমের (৫০) লাশ ত্রিশালের সদর ইউনিয়নের বাগান গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান থেকে তোলা হয়। দীর্ঘ তদন্ত ও পারিবারিক বিরোধের জটিলতায় প্রায় ৭ বছর পর আবারও আলোচনায় আসে এই মৃত্যু।
পরিবারের সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী আনিছুর রহমান বাবলুর স্ত্রী মুক্তা দীর্ঘদিন রক্তস্বল্পতা, হাই প্রেসার ও কিডনি রোগে ভুগছিলেন। অর্থাভাবের কারণে চিকিৎসাও করাতে পারছিলেন না।
২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে সিবিএমসিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পাঁচ দিন পর ১ মার্চ তিনি মারা যান। স্বজনরা তখন এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে মেনে নেন।মৃত্যুর সময় বাবলু ছিলেন স্পেনে। তিনি দেশে ফেরেন দেড় বছর পর, ২০২০ সালে।
দেশে ফিরে বাবলু কুমিল্লার বরড়া থানায় দ্বিতীয় দফায় বিয়ে করেন। সেই বিয়েও টেকেনি। কাবিনের টাকা ফেরত দিতে দুই ভাইয়ের যৌথ জমি বিক্রি করতে হয়।
ব্যবসা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাবলু ও ছোট ভাই মোশফিকুর রহমান মানিকের সম্পর্কের অবনতি হলে বিষয়টি নতুন মোড় নেয়।
২০২৩ সালে, অর্থাৎ স্ত্রীর মৃত্যুর পাঁচ বছর পর, বাবলু ত্রিশাল থানায় মানিককে প্রধান আসামি করে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। উত্তরে বাবলু দাবি করেন,“বুঝতে আমার সময় লেগেছে। আমার মেয়ে ও আম্মা বলেছে আমার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন ত্রিশাল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক মতিউর রহমান একটি ভুয়া মেডিকেল সনদ ব্যবহার করে মানিককে অভিযুক্ত করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সিআইডির পুনর্তদন্তে সে সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় মামলাটি নতুন করে আলোচনায় আসে। তদন্তের ফলাফলে বাদী অসন্তুষ্ট হয়ে নারাজি দেন। পরে আদালত মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। ডিবি পুলিশ অধিকতর তদন্তের অংশ হিসেবে মরদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ ও পুনরায় ময়নাতদন্তের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে আদালতে আবেদন করে। আদালত আবেদন মঞ্জুর করলে বৃহস্পতিবার সকালে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করা হয়।
এ সময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া নূর লিয়া উপস্থিত ছিলেন। মামলার বাদী বাবলুর ভাগনি আমেনা বলেন,“মুক্তা মামি যখন চিকিৎসা করাতে পারতেন না, তখন মানিক মামাই টাকা দিয়ে সাহায্য করতেন।”
বাবলু–মানিকের চাচাতো ভাই কাউছার আহমেদ জানান, “অসুস্থতার কারণে মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল থেকে মরদেহ আমি নিজে স্বাক্ষর করে নিয়েছি। তখন কোনো অস্বাভাবিক কিছু দেখিনি।”
স্থানীয় শহীদ মিয়া মন্তব্য করেন,“ভাই ভাইয়ের দ্বন্দ্বে মৃত মানুষকে জড়ানো খুবই জঘন্য কাজ।”
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, “যদি হত্যাকাণ্ড হতো, তাহলে প্রথমেই মৃতার মেয়ে বা পরিবার অভিযোগ তুলত। এলাকার কেউই চুপ থাকত না।”ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a comment