দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় শহীদ ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সোয়া ৯টায় ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাদের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষে শহীদ শান্তিরক্ষীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে তাদের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা শহীদদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধানুষ্ঠান শেষে শহীদ সেনাসদস্যদের মরদেহ হেলিকপ্টারযোগে নিজ নিজ জেলায় পাঠানো হয়, যেখানে পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশে তাদের দাফন সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। জানাজার আগে নিহতদের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করা হয় এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সূত্র জানায়, জাতিসংঘের পতাকাতলে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব পালনকালে জীবন উৎসর্গকারী এই ছয় শান্তিরক্ষী দেশের জন্য গৌরব ও সম্মানের প্রতীক। জানাজা অনুষ্ঠানে সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ শহীদদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হলেন—নাটোর জেলার করপোরাল মো. মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম ও সৈনিক শান্ত মন্ডল, রাজবাড়ীর সৈনিক শামীম রেজা, কিশোরগঞ্জের মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং গাইবান্ধার লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।
গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটির কাছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় তারা শহীদ হন। আকস্মিক এই হামলায় শান্তিরক্ষী বাহিনীর একটি টহল ইউনিট লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামানসহ আরও অন্তত নয়জন সেনাসদস্য আহত হন। আহতরা বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে।
গত শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে শহীদদের মরদেহ দেশে পৌঁছায়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সেনাবাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে মরদেহ গ্রহণ করা হয়। পরে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে মরদেহগুলো ঢাকা সেনানিবাসে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতার স্বীকৃতি পেয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, সুদানের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। অভ্যন্তরীণ সংঘাত, সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শান্তিরক্ষীদের ঝুঁকি বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের নিরাপত্তা জোরদার এবং শান্তিরক্ষীদের সুরক্ষায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠছে।
এদিকে, শহীদ ছয় শান্তিরক্ষীর আত্মত্যাগে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহল থেকে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। দেশের মানুষ আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গকারী এই সেনাসদস্যদের গভীর সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করছে।
Leave a comment