সিলেটে নেতাকর্মীদের অদৃশ্যতা: দলের সংকট ও অভ্যুত্থানের প্রভাব

সিলেটের রাজনৈতিক মঞ্চে এখন চারজন নেতাকর্মী অনুপস্থিত – তারা কোথায় আছেন, কারও কাছে কোনো তথ্য নেই। দলের এই সংকটকালীন সময়ে যাদের উপর ছিল আশাবাদী ভূমিকার প্রত্যাশা, তাঁদের ৮ মাসের অদৃশ্যতা সিলেটের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক গুঞ্জন সৃষ্টি করেছে।

তবে ১২ই ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশ্য ছিলেন মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। অপহরণের ঘটনার পর থেকে একেবারেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও কেউ তার অবস্থান জানেন না। মিসবাহ সিরাজ হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক তিন বারের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। সিলেটের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবীণ নেতা। স্বজনরা জানিয়েছেন- শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর নিজ এলাকায় বসবাস করতেন তিনি। ছদ্দবেশে চলাফেরা করতেন। এই অবস্থায় ১২ই ডিসেম্বর রাতে সুবিদবাজারকেন্দ্রিক একটি অপরাধী গ্রুপ তাকে অপহরণ করে। দাবি করে কোটি টাকা মুক্তিপণ। রাতের মধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে অপহরণকারীদের হাতে ২৫ লাখ টাকা তুলে দিলেও অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়নি মিসবাহ সিরাজকে।
সাগরদিঘীরপাড়ের ড্রিমসিটিতে ধরে নিয়ে তার হাত ও পায়ে কুপানো হয়। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়। ঘটনার পরদিন ভোরে নগরের আর হারমাইন হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টা চিকিৎসা নিয়ে হাওয়া হয়ে যান তিনি। এরপর থেকে মিসবাহ সিরাজ কোথায় আছেন কেউ জানেন না। দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- হাওয়া হয়ে যাওয়া মাসুক উদ্দিনের সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের কোনো যোগাযোগ নেই। তার বাড়ি নগরে মীরবক্সটুলা এলাকায়। মূল বাড়ি জকিগঞ্জে।

সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, যিনি দলের সংকটকালীন সময়ে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখার কথা ছিল, গণ-অভ্যুত্থানের আগেই বৃটেনে চলে যান। বর্তমানে তিনি বৃটেনে বসবাস করছেন, যেখানে তাঁর বড় ছেলে দেশের বাইরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতে তাকে সক্রিয় অবস্থায় দেখা গেছে। মাসুক উদ্দিনের ছোটো ভাই সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ। সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান যে কমিটির সভাপতি ছিলেন সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আলোচিত নেতা তিনি। সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরে যাওয়ার পর আসাদ উদ্দিন আহমদ নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হলেও রাজনীতিতে নীরব ছিলেন।

সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদও গত ৫ই আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। ৫ই আগস্ট পর্যন্ত তাঁর উপস্থিতি নিশ্চিত ছিল, তবে এরপর থেকে দলের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই। এই নিঃসঙ্গতা দলের অভ্যন্তরে নেতাকর্মীদের হতাশা ও প্রশ্নবিদ্ধতার জন্ম দিয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের ধারণা; ৫ই আগস্ট পর্যন্ত সিলেটেই ছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমদ। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। গত ৮ মাসে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন।

দলের মধ্যে অভ্যুত্থানের পর থেকেই সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনেরাও রাজনীতিতে নীরব হয়ে পড়েছেন। ঐতিহ্যবাহী নেতাকর্মীদের মধ্যে, সিলেট নগরের সভাপতিরা – শফিকুর রহমান চৌধুরী (লন্ডনে) ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান (ভারতে) – সক্রিয় অবস্থায় থাকলেও, নগর সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক জাকির পুরোপুরি দৃশ্যপট থেকে বাদ পড়েছেন। এ ঘটনায় দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ ও অসন্তোষ আরও বেড়ে গেছে।

সিলেটের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে, এই নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতি দলের সংকট ও বিভাজনের ইঙ্গিত দেয়। অভ্যুত্থানের পূর্বে যারা দলের মুখ ছিল, তাঁদের হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ফলে সিলেটের রাজনীতিতে নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্পষ্টতা ও হতাশার ছায়া বিরাজ করছে।