সিলেটে গত কয়েকদিন ধরে রাতের সময় ছাত্রলীগের কর্মীদের ছোটখাটো ঝটিকা মিছিল ও র্যাপিড আন্দোলনের কারণে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মসূচি নিয়ে স্থানীয় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পাল্টা প্রতিরোধে রাজপথে নেমেছে।
ছাত্রলীগের সদস্যরা নেমেছে দিনে কোনো বিশেষ কর্মসূচি না রেখে, রাতে হঠাৎ করে নগরের বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে। রোববার রাতে টিলাগড় গ্রুপের সদস্যরা গোপালটিলার পাশ থেকে মিছিল বের করার সাথে সাথে, এ ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়ে ওঠে। যদিও টিলাগড় ও আশপাশের এলাকা বর্তমানে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, ছাত্রলীগের কর্মীদের এই কর্মকাণ্ড স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে উদ্বেগের কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
টিলাগড় হচ্ছে ছাত্রলীগের হেড কোয়ার্টার। এখন অবশ্য টিলাগড় পয়েন্ট ও আশপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। টিলাগড়ে নিয়মিত তাদের অবস্থান দেখা যায়। এমসি ও সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণ রাখতে টিলাগড়ের আধিপত্য ধরে রাখতে চায় ছাত্রদল কর্মীরা। এজন্য টিলাগড়ে ছাত্রদলের অবস্থান থাকায় ছাত্রলীগ কর্মীরা এখনো সেখানে উঠতে পারেননি। টিলাগড়ের পাশেই নিরিবিলি এলাকা গোপালটিলা। এই গোপালটিলা এলাকা থেকে হঠাৎ মিছিল করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরবর্তীতে মেঘালয়ের শিলংয়ে অবস্থান করা নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেসব মিছিলের জানান দিচ্ছেন। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সিলেটের বিএনপি সহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের।
দোষারোপ করা হচ্ছে প্রশাসনকে। কিন্তু প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন- মাঝে মধ্যে ভোররাতেও তারা দু’-এক মিনিটের ঝটিকা মিছিল করে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ফলে তাৎক্ষণিক তাদের অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিসেবে যারাই কর্মসূচি পালন করতে চাইবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রোববার ভোরে হঠাৎ নগরীর নাইরপুল এলাকায় মিছিল বের করে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। তাদের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ইউনূস হটাও দেশ বাঁচাও। শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে।’ কয়েক মিনিটের এই ঝটিকা মিছিলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের এই ঝটিকা মিছিলের প্রতিবাদে রোববার রাত ১০টার দিকে একই স্থানে বিক্ষোভ করেছেন সিলেট মহানগর যুবদল নেতাকর্মীরা।
এসময় তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী এবং জেলা যুবদলের সভাপতি এডভোকেট মোমিনুল ইসলাম মোমিন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। একই সঙ্গে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের শান্ত করে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করেন।
সিলেট মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমদ শিপনের পরিচালনায় বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফজল খান পাপলু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিমুল আহমেদ, জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান ফুরুক, মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজ সাকি, জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আবুল কালাম প্রমুখ। এ ব্যাপারে যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমদ শিপন বলেন, প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে মিছিলকারী ওই ছাত্রলীগ কর্মীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
তিনি বলেন- দুষ্কৃতকারীরা গ্রেপ্তার হলে মানুষ ক্ষুব্ধ হবে না। মানুষ যাতে স্বাভাবিক থাকতে পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে বলে জানান তিনি। সিলেট নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন- ‘যুবদল নেতাদের দাবি যৌক্তিক। দেশের মানুষ পতিতদের ওপর ক্ষেপে আছে। ওরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। প্রশাসনকে এ ব্যাপারে আরও সোচ্চার হওয়ার দাবি জানাই।’ জেলা যুবদলের সভাপতি এডভোকেট মুমিনুল ইসলাম মুমিন জানিয়েছেন- ‘সিলেটের মাটিতে ফ্যাসিস্টদের ঠাঁই নেই।
নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ফেরার আশঙ্কা ও তাদের পক্ষ থেকে হঠাৎ করে শুরু হওয়া ঝটিকা মিছিল নিয়ে সিলেটের রাজপথে উত্তাপ বিরাজ করছে। যুবদল ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ জানাচ্ছেন। স্থানীয় জনমানসে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতি আস্থা বজায় রাখতে এ ধরনের অগোছালো কর্মকাণ্ড রোধ করা অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করা হচ্ছে।
Leave a comment