“যুগে যুগে সিলেটবাসী রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে”—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। লন্ডনে মানবজমিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
আরিফুল বলেন, “আমরা সিলেটবাসী সবসময়ই বঞ্চনার শিকার। সিভিল সার্ভিস, সামরিক বাহিনী কিংবা জাতীয় রাজনীতিতে আমাদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নেই। বরং পরিকল্পিতভাবে আমাদের বিভাগ থেকে বড় মাপের নেতৃত্ব তৈরি হতে দেওয়া হয়নি। উন্নয়ন কিংবা অবকাঠামোগত দিক থেকেও আমরা পেছনে পড়ে আছি।”
তিনি অভিযোগ করেন, বিগত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে সিলেট বিভাগে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। বিএনপির শাসনামলে যে কিছুটা উন্নয়ন হয়েছিল, বর্তমান সরকার তাও থমকে দিয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, নদী খনন, বিমানবন্দর বা প্রযুক্তি—সবক্ষেত্রে সিলেটকে চক্রান্ত করে অবহেলিত রাখা হয়েছে বলে দাবি তার।
আরিফুল আরও বলেন, “আমাদের পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়নি, তিনবারের বন্যায় সিলেট ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো বড় প্রজেক্ট আসেনি। অথচ অন্য জেলাগুলোর জন্য হয়েছে। গ্যাস উৎপাদন হয় সিলেটে, অথচ এখানেই গ্যাস সমস্যা প্রকট। বিদ্যুতের আন্ডারগ্রাউন্ড প্রজেক্ট বাতিল করে দিয়েছে সরকার।”
লন্ডনে আসার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “এবার এসেছি নাতনিকে দেখতে। তবে লন্ডনে আসলে স্বাভাবিকভাবেই দলের প্রধানের সঙ্গে দেখা হবে। বিশেষ কোনো মিশন নিয়ে এসেছি বলে যে গুঞ্জন আছে, তা সত্য নয়।”
নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হবো না সংসদ সদস্য—এটি দলের সিদ্ধান্ত। আমি দলীয় মনোনয়ন চাইতেই পারি। বহু বছর ধরে দলের জন্য কাজ করেছি, নির্যাতিত হয়েছি। দলের যদি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়, তাহলেও কাজ করবো।”
সিলেটে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে সাবেক মেয়র বলেন, “এই অপপ্রচার বিএনপিকে দুর্নাম দিতে করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
আরিফুল অভিযোগ করেন, “আমার জনপ্রিয়তা ক্ষুন্ন করতে কেউ কেউ মিথ্যা রটনা ছড়িয়েছে যে আমি আওয়ামী লীগ নেতাদের পালাতে সাহায্য করেছি। বরং যারা তাদের ব্যবসা নিজের নামে চালাচ্ছে, তাদের তালিকা দলের শীর্ষ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।”
বিএনপির ভেতরের অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দল এখনো টিকে আছে কেবল খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্ব ও তারেক রহমানের নির্দেশনার জন্য। তবে এখন দলে অনেক বহিরাগত ও চাটুকার ঢুকে পড়েছে। জিয়াউর রহমানের দলে চাটুকারদের জায়গা নেই। তারা যদি তওবা করে, তবে ক্ষমার সুযোগ থাকতে পারে।”
ছাত্রজীবনে নিজের রাজনৈতিক সংগ্রামের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “জাসদ ছাত্রলীগ একসময় আমাদের ওপর চরম নির্যাতন চালিয়েছিল। আজ তারা বিএনপিতে এসে চাটুকারিতা করছে, তাদের দেখলে হৃদয়ে আগুন জ্বলে ওঠে।”
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে আরিফুল হক বলেন, “আমরা এই সরকারকে সমর্থন করি না, কারণ অনির্বাচিত সরকার দিয়ে দেশ চলতে পারে না। আমরা আশা করি, ড. ইউনূস সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে তাঁর কথার বরখেলাপ করবেন না। সরকার অচিরেই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ দেবে—এটাই প্রত্যাশা।”
Leave a comment