১৯৮৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভালোবাসা দিবসের সকালে, ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদির বিরুদ্ধে এক চরম সিদ্ধান্ত নেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি। তিনি ঘোষণা করেন, রুশদি ও তাঁর বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর প্রকাশকদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত।
লন্ডনে বিবিসি ফার্সি রেডিওর প্রযোজক কাসরা নাজি সেই দিনটিকে এখনো স্পষ্টভাবে মনে করতে পারেন। তিনি বলেন, “আমি রেডিও ইরানের দুপুরের সংবাদ শুনছিলাম, হঠাৎ ঘোষকের গম্ভীর কণ্ঠে শুনতে পেলাম, আয়াতোল্লাহ খোমেনি ঘোষণা করছেন—’ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। মুহূর্তেই বুঝতে পারলাম, এটি কোনো সাধারণ ঘোষণা নয়।”
ফতোয়ায় বলা হয়, এই বইয়ের লেখক এবং প্রকাশক, যেখানেই থাকুক, তাদের হত্যা করা উচিত। এটি যেন মুসলমানদের পবিত্রতা অবমাননা করার দৃষ্টান্ত না হয়ে ওঠে। এই ঘোষণার মাধ্যমে খোমেনি এক ব্রিটিশ লেখকের মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন, যিনি ইরান থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে বসবাস করছিলেন।
এই ঘোষণার পরপরই বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ব্রিটেনে সালমান রুশদির জীবন হুমকির মুখে পড়ে এবং তাঁকে গোপনে সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। তাঁর প্রকাশক ও বই বিক্রেতারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেক দেশ ফতোয়াটির নিন্দা জানালেও, ইরানে রুশদির মাথার দাম ঘোষণা করা হয়।
এই ফতোয়ার ঘোষণা এমন এক দিনে এসেছিল, যেদিন বিশ্বজুড়ে মানুষ ভালোবাসা উদযাপন করছিল। প্রেমের দিনে হঠাৎই রুশদির জীবনে নেমে আসে মৃত্যুর ছায়া। পরবর্তী বছরগুলোতে এই ফতোয়ার কারণে রুশদির জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তাঁকে আত্মগোপনে যেতে হয়, আর সারা বিশ্বে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়।
আজও এই ঘটনা বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে আছে, যা মনে করিয়ে দেয়, একটি সাহিত্যকর্ম কখনো কখনো কতটা ভয়ংকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
Leave a comment