ফ্যাসিবাদের পতনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা করেছে। এই কর্মসূচির প্রথম দিনটি শুরু হয় একটি সাইকেল র্যালির মাধ্যমে, যা মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে যাত্রা শুরু করে। র্যালিটি রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফতেহ গণভবনের উদ্দেশে অগ্রসর হয়।
সকালবেলার এই সাইকেল র্যালিতে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের হাতে বিভিন্ন ব্যানার ও পতাকা দেখা যায়। শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজিত র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় কৌতূহল সৃষ্টি করে এবং শিক্ষার্থী ও পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
র্যালি শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম বলেন, “আজকের দিনটি আমাদের কাছে আজাদের দিন, মুক্তির দিন। ফ্যাসিবাদের পতনের এই বর্ষপূর্তি আমাদের সংগ্রাম ও ঐক্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সেই উপলক্ষ্যেই আমরা আজ সাইকেল র্যালির মাধ্যমে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা করেছি।”
তিনি বলেন, এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের মাঝে বিগত আন্দোলনের স্মৃতি ও চেতনা নতুন করে তুলে ধরা এবং গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করা। তার মতে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সবসময়ই মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
আবু সাদিক কায়েম আরও বলেন, “গত বছর যেভাবে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছি, সেই আন্দোলনে বাংলাদেশের পতাকার পাশে ফিলিস্তিনের পতাকাও উড়েছিল। আজও আমরা সেই চেতনা ও আবেগকে ফিরিয়ে আনতে চাই।” তিনি উল্লেখ করেন, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের সংগ্রাম শুধু একটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত মানুষের সঙ্গে সংহতির বিষয়।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “আমাদের স্বাধীনতা এসেছে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে। কিন্তু ফিলিস্তিন এখনও স্বাধীন নয়। আমরা বিশ্বাস করি, ন্যায়বিচার ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মাধ্যমে একদিন সেখানে স্বাধীনতার পতাকা উড়বে।” তার এই বক্তব্যে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সংহতির অনুভূতি প্রকাশ পায়।
কর্মসূচির অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে রয়েছে বিপ্লবের গান ও কবিতা আবৃত্তি, শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের জীবনসংগ্রামের গল্প উপস্থাপন, নাটক ও মাইম পরিবেশনা। পাশাপাশি পরিকল্পিত বিতর্ক (প্ল্যানচেট বিতর্ক) ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে সমসাময়িক রাজনীতি, ছাত্র আন্দোলন ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে আলোচনা হবে।
শিবির নেতারা জানান, এই আয়োজনগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং যে কোনো শিক্ষার্থী সেখানে অংশ নিতে পারবেন। তাদের দাবি, কর্মসূচির উদ্দেশ্য কোনো সংঘাত সৃষ্টি নয়, বরং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক চর্চাকে উৎসাহিত করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করে আসছে। শিবিরের এই তিন দিনব্যাপী কর্মসূচিও সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘিরে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
Leave a comment