Home আন্তর্জাতিক শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিকজাতীয়রাজনীতি

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিক্রিয়া

Share
Share

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো থেকে তীব্র ভিন্নমত প্রকাশ পেয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রায় ঘোষণার বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ জানালেও ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) বলেছে, বাংলাদেশের জনগণের বড় অংশ এই রায়কে স্বাগত জানাবে।

অপরদিকে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, এই রায় প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বিচার পরিচালনায় সক্ষম। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও রায়কে স্বাগত জানিয়ে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত দেশে প্রত্যাবর্তন ও রায় কার্যকরের দাবি জানানো হয়েছে।
নিচে প্রধান মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অবস্থান তুলে ধরা হলো—

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ: “বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ”
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে জানায়, শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিচার আন্তর্জাতিক ন্যায্যতার মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। সংস্থাটির অভিযোগ—
• আসামিপক্ষকে যথাযথ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি
• স্বাধীনভাবে আইনজীবী বেছে নেওয়ার অধিকার নিশ্চিত হয়নি
• সাক্ষী উপস্থাপন ও জেরা করার সুযোগ সীমিত ছিল
• এবং পুরো বিচারই আসামিদের অনুপস্থিতিতে পরিচালিত হয়েছে।
তারা জানিয়েছে, অনুপস্থিতিতে বিচার আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চুক্তির (ICCPR) ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন। এইচআরডব্লিউ আরও জানায়, মৃত্যুদণ্ড আরোপ করায় ন্যায়বিচার নিয়ে উদ্বেগ আরও গভীর হয়েছে। সংস্থাটি সব ক্ষেত্রেই মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর (OHCHR): “রায় গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু মৃত্যুদণ্ডে উদ্বেগ”
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বলেছে, ২০২৪ সালের বিক্ষোভ দমনের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের জন্য এই রায় “গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ”, তবে মৃত্যুদণ্ড প্রদান নিয়ে তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে—
• তারা বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেনি
• কিন্তু অনুপস্থিতিতে পরিচালিত বিচার ও মৃত্যুদণ্ড প্রদান—দুটিই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক
• এবং বিচারকার্যের স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়া উচিত ছিল।
সংস্থাটি আরও মনে করে, আন্তর্জাতিক অপরাধের মতো গুরুতর অভিযোগে বিচার অবশ্যই সন্দেহাতীত স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হওয়া উচিত।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল: “এই রায়ে ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার হয়নি”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মাধ্যমে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত বা নির্যাতিত ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পায়নি।
সংস্থাটির মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন—
• অপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে
• কিন্তু এই বিচার ন্যায়সঙ্গত হয়নি
• মৃত্যুদণ্ড মানবাধিকার লঙ্ঘনকে আরও গভীর করেছে
• এবং ভুক্তভোগীরা এর মাধ্যমে প্রকৃত ন্যায়বিচার পায়নি
তিনি আরও বলেন, “২০২৪ সালের জুলাইয়ের ভুক্তভোগীরা এর চেয়ে অনেক ভালো, আরও নিরপেক্ষ এবং মৃত্যুদণ্ডবিহীন বিচার পাওয়ার যোগ্য।”

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ: “রায় রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশে সমর্থন পাবে”
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বলেছে, বিচার প্রক্রিয়ায় কিছু ত্রুটি থাকলেও, বাংলাদেশের জনগণের বড় অংশ এই রায়কে স্বাগত জানাবে, কারণ জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভে সংঘটিত নৃশংসতায় শেখ হাসিনার দায় নিয়ে “খুব কম মানুষেরই সন্দেহ আছে”।
গ্রুপটির পর্যবেক্ষণ—
• অনুপস্থিতিতে বিচার সবসময় বিতর্ক সৃষ্টি করে
• দ্রুত বিচার ও আসামিপক্ষের সীমিত সুযোগ ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে
• কিন্তু এটি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের সমস্যার প্রতিফলন
• তবুও রায়টি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হবে
সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ পরামর্শক থমাস কিন বলেছেন—
• এই রায়ের পর শেখ হাসিনার রাজনৈতিকভাবে ফেরার সম্ভাবনা এখন “অত্যন্ত ক্ষীণ”,
• আওয়ামী লীগেরও রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসতে বাধার মুখে পড়তে হবে
• এবং দেশের সাম্প্রতিক সহিংসতা নির্বাচন-আগামী উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি বলেছেন, রায় প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে বিচার করতে সক্ষম। তিনি এটিকে জাতির ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতির পুনঃপ্রতিফলন বলে মন্তব্য করেছেন। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও রায়কে সমর্থন জানিয়েছে এবং শেখ হাসিনাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের দাবি তুলেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো একদিকে বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, অনুপস্থিতিতে বিচার এবং মৃত্যুদণ্ড নিয়ে কঠোর আপত্তি তুলেছে; অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বলছে যে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে রায়টি গ্রহণযোগ্য হবে এবং এর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

পাকিস্তানে পুলিশের গাড়িতে আইইডি বিস্ফোরণ, নিহত ৩

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খায়বার পাখতুনখোয়া প্রদেশে পুলিশের গাড়িকে লক্ষ্য করে শক্তিশালী আইইডি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দেরা ইসমাইল খান জেলার পানিয়ালা এলাকায়...

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালকে প্রত্যর্পণ করবে ভারত : প্রেস সচিব

জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ভারত, বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করবে বলে দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি...

Related Articles

জামালপুরে ইঁদুর মারার ট্যাবলেট খেয়ে ২ জনের মৃত্যু

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে গ্যাসের ওষুধ ভেবে ভুল করে ইঁদুর মারার ট্যাবলেট সেবন করায়...

লন্ডন যাচ্ছেন না খালেদা জিয়া

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য আপাতত লন্ডনে...

সীমান্তে বিজিবির বিশেষ অভিযানে ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ভারতীয় পণ্য উদ্ধার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা জেলার সীমান্ত এলাকায় টানা এক সপ্তাহের বিশেষ অভিযানে প্রায়...

মোহাম্মদপুরে মা–মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা ও মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (৮...