আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পেলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, “আমি শেখ হাসিনার পক্ষে আর দাঁড়াচ্ছি না।”
এর আগে তিনিই স্বেচ্ছায় শেখ হাসিনাকে ডিফেন্ড করার আগ্রহ প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনের পর গত ২৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ তাকে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়। ট্রাইব্যুনাল–১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ নিয়োগ অনুমোদন করলেও এখনো আনুষ্ঠানিক নিয়োগপত্র পাননি বলে জানিয়েছেন পান্না।
স্টেট ডিফেন্স থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জেড আই খান পান্না বলেন, আদালতে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে—এই ঘটনায় তিনি ফজলুর রহমানের পক্ষে লড়াই করবেন। তার মতে, একই সময়ে উভয় দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন,“আদালত অবমাননার মামলায় আমি ফজলুর রহমানের পক্ষে লড়ব। সে কারণে শেখ হাসিনার ডিফেন্সে থাকা আমার জন্য উপযুক্ত নয়। আরও একটি বিষয় হচ্ছে—যেহেতু শেখ হাসিনা আদালতটির প্রতি আস্থা প্রকাশ করেননি, তাই তাকে ডিফেন্ড করা যৌক্তিক হবে না।”
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে টিএফআই সেল এবং জেআইসি সেলের অধীনে পৃথক দুই মামলায় মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান। এর মধ্যে টিএফআই সেলের মামলায় ১৭ আসামি এবং জেআইসি সেলের মামলায় ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি যথাক্রমে ৩ ও ৭ ডিসেম্বর নির্ধারিত হয়েছে।
এই দুই মামলায় ইতোমধ্যে ১৩ জন সেনা কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছে । তাদের মধ্যে রয়েছেন—র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম ,ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন। এদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গুম, খুন ও নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
একই মামলায় পলাতক সাতজনের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রীয় খরচে তাদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের ব্যবস্থা করে।
জেড আই খান পান্নার পাশাপাশি এম হাসান ইমামকে আরেকজন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যিনি মামলাগুলোতে পলাতক আসামিদের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
ভিডিও বার্তায় পান্না জানান, আনুষ্ঠানিক নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পর তিনি ট্রাইব্যুনালকে তার সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে জানাবেন। তবে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতির মাধ্যমে তিনি আগেই স্পষ্ট করেছেন—শেখ হাসিনার পক্ষে আর আদালতে দাঁড়াতে চান না।
আইনজীবী মহলে এই সিদ্ধান্ত এখন আলোচনার কেন্দ্রে। অনেকের মতে, মানবাধিকার বিষয়ক কাজে সক্রিয় ভূমিকার জন্য পরিচিত পান্নার এই সিদ্ধান্ত মামলার ভবিষ্যৎ অগ্রগতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। ফেসবুক ভিডিও বার্তায় প্রকাশিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জেড আই খান পান্না কার্যত জানিয়ে দিলেন—ব্যক্তিগত নৈতিক অবস্থান এবং সহকর্মীর সাপোর্টকে অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি শেখ হাসিনার ডিফেন্স থেকে সরে যাচ্ছেন। এখন ট্রাইব্যুনাল কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং এই মামলা কোন পথে এগোয়—সেটিই এখন দেখার বিষয়।
Leave a comment