লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে মা-মেয়েকে হত্যার নয় দিন পর চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত পারভেজ নিজের মামি ও মামাতো বোনকে নৃশংসভাবে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুটের উদ্দেশ্যেই তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আক্তার হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আর্থিক সংকটে পড়েই পারভেজ তার মামির বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে নির্মম এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।”
পুলিশ জানায়, গ্রেফতার পারভেজ রামগঞ্জ উপজেলার সোনাপুর মহাধর বাড়ির প্রবাস ফেরত আব্দুল করিমের ছেলে। সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার পর পারভেজ চরম অর্থকষ্টে ভুগছিলেন। তার মাথায় ঘুরছিল মামার বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার লুটের পরিকল্পনা।
ঘটনার দিন পারভেজ একটি চাকু সঙ্গে নিয়ে মামার বাড়িতে যান। মামি জুলেখা ও মামাতো বোন মীম তাকে আমড়া-আপেল খেতে দেয়। একপর্যায়ে মীমের সঙ্গে দ্বিতীয় তলায় ওঠেন পারভেজ। সেখানে মীম চাকু দেখতে পেয়ে চিৎকার দিলে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে পারভেজ তাকে গলা কেটে হত্যা করেন।
এরপর নিচে নেমে মামিকে বলেন— “মীম আপনাকে ডাকছে।” কানে কম শোনা জুলেখা বেগম ওপরতলায় গেলে পেছন থেকে মাথায় প্লেট দিয়ে আঘাত করেন পারভেজ। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে টি-টেবিল দিয়ে মাথায় আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
হত্যার পর আলমারি ভেঙে স্বর্ণালংকার লুট করেন পারভেজ। নিজের রক্তমাখা জামাকাপড় ব্যাগে ভরে মামাতো ভাইয়ের কাপড় পরে ঘর থেকে বের হয়ে যান। পরে সেই জামাকাপড়ের ব্যাগ রামগঞ্জের এক খালে ফেলে দেন। ঘটনার নয় দিন পর, বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ দল ঢাকার তুরাগ থানাধীন মনিরের গ্যারেজ এলাকা থেকে পারভেজকে গ্রেফতার করে।
জেলা পুলিশ সুপার জানান, “গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই পারভেজ হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত স্বীকার করেছে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঘটনার ক্রম, হত্যার উদ্দেশ্য এবং লুট হওয়া স্বর্ণালংকার উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।”
উল্লেখ্য, গত ৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টার মধ্যে রামগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের উত্তর চন্ডিপুর গ্রামের খামারবাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত জুলেখা বেগম স্থানীয় ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের স্ত্রী, আর মেয়ে তানহা আক্তার মীম স্থানীয় এক কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেদিন রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তখন থেকেই ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। হত্যার পর পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে দুইজনকে গ্রেফতার করলেও তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আসল হত্যাকারীর পরিচয় প্রকাশ পায়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. আক্তার হোসেন বলেন, পারভেজের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা চলমান রয়েছে এবং আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্তে আরও কিছু তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।
Leave a comment