রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নিজ বিভাগের কয়েকজন জুনিয়র শিক্ষার্থীকে ডেকে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা ধরে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের ইমিডিয়েট সিনিয়র কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
এসময় কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে গালিগালাজ, অশালীন অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করা, অশ্লীল কবিতা আবৃত্তি করানোর জন্য বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন জুনিয়র ব্যাচের দু’জন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অ্যাকাডেমিক ভবনের ছাদে ডেকে আনা হয় তাদের। টানা ৫ ঘণ্টা মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে জানান তারা। এ ঘটনায় মানসিক চাপ, লজ্জা ও নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরে দুই শিক্ষার্থী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রোববার দুপুরে প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন ।
অভিযুক্তরা হলেন- হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের মুকমিনুল ইসলাম চৌধুরী, গোলাম রাব্বী, মাহাবুব হোসেন, মেহেদী হাসান মিঠু, শাহ পরান এবং শাহাদাত হোসেন। এসময় তাদের ব্যাচের আরো ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।
অন্যদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন- একই বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের আব্দুল্লাহ শেখ ও মেজবাহ দেওয়ান ও তাদের কয়েকজন সহপাঠী। লিখিত অভিযোগে শুধুমাত্র তাদের দুজনের নাম থাকলেও ব্যাচের অন্য কারোর নাম নেই এমন প্রশ্নে তারা দু’জন জানায়, ভয়ে অন্যরা প্রক্টর স্যারের কাছে অভিযোগ দিতে আসেনি। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে এবং ঘটনার বিচার চেয়ে তারাই শুধুমাত্র সাহস করে এসেছেন।
লিখিত অভিযোগপত্রে তারা উল্লেখ করেছেন, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিভাগের ইমিডিয়েট সিনিয়র কয়েকজন ভাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ের ছাদে আমাদের সেশনের কয়েকজন বন্ধুকে ডেকে নিয়ে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থীর সামনে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা ধরে মানসিকভাবে প্রচণ্ড মাত্রায় নির্যাতন করে। এসময় তারা আমাদেরকে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে গালিগালাজ করে। এরপর আমাদের দিয়ে বিভিন্ন অশালীন অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করে। আমাদের দিয়ে অশ্লীল কবিতা আবৃত্তি করায় ।
মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে জানিয়ে তারা উল্লেখ করেছেন, এসব করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করলে বাবা-মা তুলে গালিগালাজ করে। আমাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিভিন্ন কথার মাধ্যমে হেনস্তা করে। মোবাইল ফোন জমা রেখে এসব কর্মকাণ্ড করেছে যাতে কেউ কোন প্রমাণ রাখতে না পারে। বিষয়টি আমাদের মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে গতকালের ঘটনাটি আমাদের জন্য চরম লজ্জাজনক এবং ভীতিকর । উক্ত ঘটনার কারণে আমরা চরম মানসিক চাপ, লজ্জা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে অভিযুক্ত গোলাম রাব্বীকে ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন, গতকাল র্যাগিংয়ের মতো কোনো ধরনের ঘটনা সে সময় হয়নি। একটি টুর্ণামেন্টে আমাদের বিভাগ জয়ী হয়, সে উপলক্ষ্যে জুনিয়রদের সাথে আমাদের খাওয়া দাওয়ার একটি আয়োজন ছিল। আপনি ওদের (ভুক্তভোগীদের) ব্যাচের অন্য কারো থেকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, আমাদের তরফ থেকে এ ধরনের কিছু হয়নি।
আরেক অভিযুক্ত মাহাবুব হোসেন বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এসেছে সেগুলোর কোনোটিই সত্য নয়। গতকাল একটি খাবারের আয়োজন ছিল। এর বেশি কিছুই হয় নি। আমাদের কাছে খাবারের ভিডিও, নিজেদের একসাথে তোলা ছবি সবই আছে। অভিযোগগুলো সবই মিথ্যা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, আজ দুপুরে আমি একটি অভিযোগ পাই। বিষয়টি নিয়ে সন্ধ্যায় ভিকটিমদের সাথে কথা বলেছি। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে ঘটনাটি সত্য। অভিযুক্ত ও ভিকটিমসহ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলবো আগামীকাল।
পরবর্তীতে ঘটনাটির সত্যতা যাচাই ও অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে।
Leave a comment