নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দলীয় তহবিল গঠনের জন্য ‘ক্রাউডফান্ডিং’ ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছে। গত ৮ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনলাইন ও অফলাইনে ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে দলের কার্যালয় স্থাপন ও নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ করব।’
বিপুলসংখ্যক মানুষ যখন কোনো ব্যবসা, উদ্যোগ বা রাজনৈতিক দলের জন্য অল্প পরিমাণ অর্থ প্রদান করে, সেটাকে ক্রাউডফান্ডিং বলা হয়। সাধারণত এই অর্থ ফেরত দিতে হয় না। বিশ্বজুড়ে স্টার্টআপ, সামাজিক উদ্যোগ এবং রাজনৈতিক দলগুলো এই পদ্ধতির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে।
ক্রাউডফান্ডিংয়ের কয়েকটি ধরন রয়েছে—কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী সুদসহ টাকা ফেরত পান, কেউ শেয়ার কেনেন, আবার কেউ অনুদান হিসেবেও অর্থ দেন। ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ রক ব্যান্ড ম্যারিলিওন তাদের পুনর্মিলনী সফরের জন্য প্রথমবারের মতো অনলাইন অনুদান সংগ্রহ করে। এরপর ২০০১ সালে ‘আর্টিস্টশেয়ার’ নামে প্রথম ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম চালু হয়।
রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিরা গণতহবিল সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। ভারতের আম আদমি পার্টি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় ক্ষুদ্র দাতাদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন।
যুক্তরাজ্যের নির্বাচন কমিশনের মতে, রাজনৈতিক ক্রাউডফান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। দাতাদের পরিচয় এবং অর্থ কোথায় ব্যয় করা হচ্ছে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয়।
বাংলাদেশেও রাজনৈতিক দলে গণতহবিলের প্রচলন রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকা জরুরি বলে মনে করেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘গণতহবিল সংগ্রহ করা আইনত নিষিদ্ধ নয়, তবে এর উৎস ও লেনদেনের তথ্য প্রকাশ্য থাকা উচিত। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন যেন নিরীক্ষা করতে পারে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির এই উদ্যোগ রাজনৈতিক অর্থায়নে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
Leave a comment