‘চোর অপবাদ’ দিয়ে শহরতলীর টুকেরবাজারে সিলেটে র শিশু রাজনকে প্রকাশ্য পিটিয়ে খুন করে লাশ গুমের ঘটনা খুব বেশি দিন আগের নয়। এবার রাজনের মতো বিশ্বনাথ উপজেলার ১৪ বছর বয়সী অলিউরও গত রোববার একইভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাসছে সেই নির্মমতার ৩৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ।
এতে দেখা গেছে, এক কিশোরকে হাতের লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে একজন যুবক। তাকে ধরে আছে আরেকজন। গোল হয়ে দাঁড়িয়ে নারী-পুরুষ সেটি দেখছেন আর হাসছেন। অন্যদিকে, বাঁচাও বাঁচাও বলে নির্মমতার শিকার কিশোর অলিউর গগণবিদারী আর্তনাদ করছেন। নির্যাতনে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেতলে যায় অলিউরের।
ঘটনাস্থল বিশ্বনাথের মটুকোনা গ্রামের দেওকলস গ্রামের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লায়েক আহমদের বাড়ি। পার্শ্ববর্তী মজিপুর গ্রামের বাসিন্দা রুহেল মিয়ার ছেলে কিশোর অলিউর রহমান রোববার বিকালে বিশ্বনাথ থেকে বাড়ি ফিরছিল। সে বিশ্বনাথে একটি নিত্যপণ্যের কোম্পানির সেলসম্যান হিসেবে কাজ করে। মটুকোনা গ্রামে পৌঁছামাত্র গরু চোর অপবাদ দিয়ে তাকে আটক করে এলাকার নানু মিয়া, লোকমান, সুমন, বারীকসহ কয়েকজন। গ্রামের রাস্তাতেই অলিউর রহমানকে বেধড়ক পেটানো হয়। এরপর তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লায়েকের বাড়িতে। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লায়েক আহমদ সেখানে উপস্থিত রয়েছেন। এ সময় কয়েকজন যুবক তাকে মারধর করছে। একইসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদও করছে। এতে ক্ষোভ ঝাড়েন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। গালিগালাজ করেন উপস্থিত থাকা উত্তেজিত যুবকদের। এরপর তিনি হাত-পা বেঁধে রাখা কিশোর অলিউরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে বলেন, তার অভিভাবককে ডেকে এনে তাকে ছেড়ে দিতে।
চেয়ারম্যানের এই ভিডিও এখানে শেষ হলেও অপর এক ভিডিওতে দেখা গেছে; মটুকোনা গ্রামের আব্দুল বারীক নামে এক যুবক হাতে লাঠি নিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছেন অলিউরকে। এমন ভিডিও যারা দেখছেন তারা ধিক্কার জানাচ্ছেন। ঘটনায় ক্ষোভ বাড়ছে বিশ্বনাথে।
অলিউরের শারীরিক অবস্থার বিবরণ দিয়ে আরেকটি ভিডিও করা হয়। সেখানে নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন কিশোর অলিউর। এতে দেখা গেছে, লাঠির আঘাতে অলিউরের গোটা শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। কিশোর অলিউর রহমান জানায়, তাকে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করে ওই গ্রামের নানু মিয়া।
এদিকে, নির্মম নির্যাতনে গুরুতর আহত অলিউর রহমানকে সন্ধ্যার পর সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করা হয়। তাকে জরুরি বিভাগে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়ার পর দু’দিন রেখে বাড়ি নেয়া হয়েছে। তবে এখনো ভালোভাবে হাঁটতে পারছে না অলিউর রহমান। তার শরীরের অভ্যন্তরীণ অংশে জখম হয়েছে।
এদিকে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ঘটনার গভীরতা আঁচ করতে পেরে সরব হয় বিশ্বনাথ থানা পুলিশ। এ ঘটনায় সোমবার অলিউরের মা জলি বেগম বিশ্বনাথ থানায় দেওকলস ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন , এটি একটি অমানবিক ঘটনা, এ ঘটনায় মামলা নেয়া হয়েছে । সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা, সিনিয়র এএসপি সম্রাট হোসেন জানিয়েছেন, পুলিশ আসামি ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। কয়েকটি টিম একসঙ্গে মাঠে কাজ করছে।
Leave a comment