জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন মোড় এসেছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৈঠক চললেও রাজনৈতিক অস্থিরতা থামার কোনো লক্ষণ নেই। একদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগ, অন্যদিকে, সুইং ভোটারদের ভূমিকা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কৌশল, সব মিলিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি।
ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পর রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছে, কিন্তু সেই পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকেও নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। নির্বাচনের আগে ও পরে দলগুলোর অবস্থান স্পষ্ট হতে থাকলেও, বিভক্ত রাজনীতি এবং ব্যক্তি-স্বার্থের লড়াই পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।
নতুন গঠিত দলগুলো যেমন নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান সুসংহত করতে চাচ্ছে, তেমনি পুরোনো দলগুলো নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা এবং রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে একাধিক নেতা সেনাপ্রধানের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন, যা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এই ধরনের পদক্ষেপ রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সুইং ভোটারদের গুরুত্ব বরাবরই উল্লেখযোগ্য। ’৯১–এর নির্বাচনে ঢাকায় আওয়ামী লীগের ভরাডুবি, ’৯৬–এর নির্বাচনে বিএনপির বিপর্যয়, সবই সুইং ভোটারদের ভূমিকার প্রমাণ। এবারও তাঁদের সিদ্ধান্তই হয়তো নির্ধারণ করবে আগামীর ক্ষমতার মেরুকরণ।
একটি বড় দল দ্রুত জাতীয় নির্বাচন চাইলেও, আরেকটি দল আশঙ্কা করছে, তাদের নির্বাচনী ময়দান থেকে দূরে সরিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র চলছে। রাজনৈতিক মহলে ‘মাইনাস ফর্মুলা’ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অতীতে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে কোণঠাসা করতে চেয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি উল্টো হয়েছে। এবার ইতিহাস কি নিজেকে আবারও পুনরাবৃত্তি করবে?
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছেন। তবে, বাস্তবতা হলো, নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কৌশল একসঙ্গে চলতে পারছে না। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলই হয়তো নির্ধারণ করবে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপরেখা।
Leave a comment