বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল তারকা সাকিব আল হাসান স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন—ক্রিকেট ক্যারিয়ার প্রায় শেষের পথে, তবে দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা এখনও অটুট। ‘বিয়ার্ড বিফোর উইকেট’ নামের একটি আন্তর্জাতিক পডকাস্টে অংশ নিয়ে তিনি তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার কথা খোলাখুলিভাবে তুলে ধরেন।
২০২৪ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন সাকিব আল হাসান। এরপর থেকে জাতীয় দলে তার অনুপস্থিতি নিয়ে নানা আলোচনা তৈরি হয়। কেউ বলেছিলেন দীর্ঘ বিশ্রামের পরিকল্পনা, কেউ বলেছিলেন ফিটনেস সমস্যা, আবার অনেকে মনে করতেন তিনি বিদেশে ব্যস্ততায় ডুবে আছেন। তবে পডকাস্টেই তিনি প্রথমবার খোলাসা করেন যে, তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার এখন শেষের দিকে। সাকিব বলেন,“আমার মনে হয় ক্রিকেট ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ করেছি। শুধু আরেকটি কাজ বাকি আছে—একটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলে তিন ফরম্যাট থেকেই অবসর নেওয়া।”
তিনি জানান, নিজের শেষ সিরিজটি বাংলাদেশে খেলতে চান—টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলেই আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চান। তার ভাষায়,“আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও অবসর নেইনি। পরিকল্পনা হচ্ছে দেশে ফিরে একটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলে বিদায় জানানো। একটি সিরিজ খেলেই ক্যারিয়ার শেষ করতে চাই।”
এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সাকিবের বিদায়ী ম্যাচের প্রত্যাশায় থাকা ভক্তরা মনে করছেন, হয়তো খুব শিগগিরই সেই মুহূর্ত এসে যাবে।
ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষের পথে হলেও সাকিব পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে, রাজনীতি তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তবে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে তিনি দেশে ফেরেননি। এ প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, দেশে ফিরতে চাইলেও নানা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি।
পডকাস্টে রাজনীতি নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন,“এটা এমন কিছু যা আমি বাংলাদেশের মানুষ এবং মাগুরাবাসীর জন্য করতে চাই। আমার ইচ্ছা আগেও ছিল, এখনও আছে। আল্লাহ আমাকে কোথায় নিয়ে যান দেখি।”
তার এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ মনে করছেন তিনি ভবিষ্যতে আরও সক্রিয় হবেন, আবার কেউ মনে করছেন তিনি সময় দেখে সিদ্ধান্ত নিতে চান।
মাগুরা-১ আসনে নির্বাচিত হওয়ায় এলাকাবাসীর সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে তিনি বিশেষভাবে আবেগপ্রবণ। পডকাস্টে তিনি জানান, মাগুরার মানুষের প্রতি তাঁর আলাদা টান রয়েছে।
মাগুরার স্থানীয় ভোটারদের মধ্যেও সাকিবের মন্তব্য নিয়ে নতুন আশা ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, দেশে ফেরার পর তিনি এলাকায় আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায়ের প্রধান চরিত্রদের একজন সাকিব। তার বিদায়ী ম্যাচকে ঘিরে বড়সড় আয়োজন প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
একদিকে ক্যারিয়ারের শেষ সিরিজের ইঙ্গিত, অন্যদিকে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার প্রত্যাশা—উভয় ক্ষেত্রেই আলোচনার ঝড় তুলেছে। ভক্তরা যেমন তার বিদায়ী ম্যাচের অপেক্ষায়, তেমনি রাজনৈতিক কর্মী ও বিশ্লেষকরাও আগ্রহী হয়ে দেখছেন রাজনীতির মাঠে তার পরবর্তী ভূমিকা। সবশেষে, সাকিব নিজেই বলেছেন,“দেখা যাক, আল্লাহ আমাকে কোথায় নিয়ে যান।”
Leave a comment