ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নতুন করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। বুধবার (২৯ অক্টোবর) স্থানীয় সময় ভোররাতে এই হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সূত্র অনুযায়ী, রাফাহ সীমান্ত এলাকায় এক ইসরায়েলি সৈন্য বন্দুক হামলায় আহত হওয়ার পরপরই প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজায় নতুন হামলার নির্দেশ দেন।
হামলার পরপরই ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডস এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ এনেছে।
তারা জানিয়েছে, “ইসরায়েলের আগ্রাসন অব্যাহত থাকলে যুদ্ধবিরতির চুক্তি কার্যকর থাকবে না।” হামাস আরও জানায়, নিহত ও নিখোঁজ বন্দিদের মরদেহ উদ্ধারের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের সরাসরি পরিণতি।
সংগঠনটি সতর্ক করে বলেছে, “ইসরায়েল যদি বড় ধরনের উস্কানিমূলক হামলা চালায়, তাহলে গাজার বিভিন্ন এলাকায় মৃতদেহ উদ্ধারের কার্যক্রম বিলম্বিত হবে এবং ১৩ জন ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ উদ্ধারে সময় লাগবে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, হামাসের পক্ষ থেকে রাফাহ সীমান্তে হামলা চালানো হয়েছিল, যা যুদ্ধবিরতির ‘অবমাননা’। তিনি বলেন, “ইসরায়েল আত্মরক্ষার অধিকার রাখে এবং যারা আমাদের সৈন্যদের আঘাত করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স এক ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “ছোটখাটো সংঘর্ষ ঘটতে পারে, তবে যুদ্ধবিরতি এখনো বহাল আছে। আমরা আশা করছি শান্তি পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে।” তার এই মন্তব্যের পর আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা দেখা দিয়েছে, কারণ হামলার মাত্রা ও হতাহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানায়, বুধবারের হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত এবং ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন। এছাড়া, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তারা আরও দাবি করেছে, ইসরায়েল মানবিক ত্রাণ কার্যক্রম সীমিত করে রেখেছে, ফলে অনেক এলাকা এখনো খাদ্য, ওষুধ ও জরুরি সরঞ্জাম থেকে বঞ্চিত। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য সুহাইল আল-হিন্দি আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “গাজার মাটিতে মৃতদেহ উদ্ধারে আমরা চরম সমস্যার মুখে পড়েছি। ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনই এই বিলম্বের কারণ।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে চলছি, কিন্তু ইসরায়েল বারবার লঙ্ঘন করছে। তারা মানবিক সংকটকে আরও গভীর করে তুলছে।” জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলি এই হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয় বলেছে, “যুদ্ধবিরতির নামে হামলা বন্ধের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন।”
তারা উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। রাফাহ, খান ইউনিস এবং গাজার উত্তরাঞ্চলে এখনো ভারী বোমাবর্ষণের শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সাংবাদিকরা। ইসরায়েলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমান গাজার আকাশে টহল দিচ্ছে, ফলে মানুষজন ঘরবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। হামাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “যুদ্ধবিরতির নামে ইসরায়েল একতরফাভাবে হামলা চালাচ্ছে। এভাবে চললে শান্তির সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।”
Leave a comment