যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নতুন অস্ত্র ও নজরদারি বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করেছে ভারত, যা দেশটির পক্ষ থেকে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়াগুলোর একটি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনজন ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর দুই দেশের সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেই প্রেক্ষিতে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফর বাতিল করা হয়েছে এবং সাময়িকভাবে সমস্ত অস্ত্র ক্রয় আলোচনা স্থগিত রাখা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে আর্থিকভাবে সহায়তা করছে। সেই কারণেই ভারতীয় পণ্যের ওপর সর্বমোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতও আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার আলোচনা বন্ধ রেখেছে, যার মধ্যে ছিল জেনারেল ডায়নামিকসের স্ট্রাইকার যুদ্ধযান ও রেথিয়ন এবং লকহিড মার্টিনের তৈরি জ্যাভলিন ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।
যদিও ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র দাবি করেছে যে, অস্ত্র কেনার আলোচনা স্থগিতের খবর ‘ভুল ও বিভ্রান্তিকর’, তবুও বিভিন্ন স্তরে আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। ভারতের কর্মকর্তারা জানান, লিখিতভাবে কোন আদেশ না এলেও প্রকৃত অর্থে এখন কেনাকাটার সম্ভাবনা নেই।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ও মোদি এক যৌথ উদ্যোগে অস্ত্র কেনা ও উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরিকল্পনামাফিক, ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ছয়টি বোয়িং পি-৮১ নজরদারি বিমান কেনা এবং প্রায় ৩৬০ কোটি ডলারের সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরের কথা ছিল রাজনাথ সিংয়ের সফরে। কিন্তু সফর বাতিল হওয়ায় সেই পরিকল্পনা থেমে গেছে।
ভারত ঐতিহ্যগতভাবে রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনে, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ইসরায়েলের দিকেও ঝুঁকেছে। রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানি সক্ষমতা হ্রাস এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নিজেদের অস্ত্র মজুতের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে যাওয়ায় ভারত অন্য উৎসের দিকে তাকিয়েছে। তবে সেই বিকল্প সূত্রের একটি—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেই এখন সম্পর্ক টানাপোড়েনের মুখে।
ভারত সরকার বলছে, পশ্চিমা মিত্ররাও নিজেদের স্বার্থে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু শুধু ভারতকেই নিশানা করা হচ্ছে। তেল আমদানি কমানোর বিষয়ে দিল্লি নমনীয় অবস্থানে গেলেও, সমমূল্যে তেল না পেলে রাশিয়া থেকে আমদানি বন্ধ করা কঠিন হবে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদী আবেগ ও ট্রাম্প প্রশাসনের কূটনৈতিক অবস্থান মোদির জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণকে আরও কঠিন করে তুলছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র-ভারত প্রতিরক্ষা সম্পর্কের অন্য দিকগুলো—যেমন গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও যৌথ সামরিক মহড়া—চলমান রয়েছে, তবে অস্ত্র ক্রয় নিয়ে অনিশ্চয়তা দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলছে।
Leave a comment