ঢাকা মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত পথচারী আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া মেট্রোরেলে চাকরি পাচ্ছেন। নিহতের পরিবারকে সহায়তার অংশ হিসেবে এই মানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সংস্থাটির একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ডিএমটিসিএলের এক কর্মকর্তা জানান, নিহত আবুল কালামের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে কর্তৃপক্ষ দ্রুত সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন,“বিয়ারিং প্যাড দুর্ঘটনায় নিহত আবুল কালামের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার স্ত্রী আইরিন পিয়াকে মেট্রোরেলে চাকরি দেওয়া হবে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা যাচাই করে উপযুক্ত পদ নির্ধারণ করা হবে।”
তিনি আরও বলেন,“আমরা চাই এই পরিবারটি যেন দ্রুত আর্থিক ও মানসিকভাবে কিছুটা স্থিতি ফিরে পায়। মানবিক বিবেচনা থেকেই ডিএমটিসিএল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
গত ২৬ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশনের পশ্চিম পাশে ৪৩৩ নম্বর পিলার থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে নিচে হাঁটতে থাকা পথচারী আবুল কালাম আজাদের মাথায় পড়ে। ঘটনাস্থলেই গুরুতর আহত হয়ে তিনি মারা যান।
নিহত আবুল কালাম (৩৫) রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। প্রতিদিনের মতো সেদিনও কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন তিনি। আকস্মিক এই দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুতে পরিবারসহ স্থানীয় বাসিন্দারা গভীর শোক প্রকাশ করেন।
দুর্ঘটনার পর নিহতের স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।
দুর্ঘটনার পরপরই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। একই দিন সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আব্দুর রউফকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণ, দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় উল্লেখ থাকবে বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানায়, দুর্ঘটনার পরপরই পুরো প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। যান্ত্রিক ও স্থাপত্যগত অংশগুলোর নিয়মিত পরিদর্শন এবং রক্ষণাবেক্ষণ তদারকি বাড়ানো হয়েছে।
ডিএমটিসিএলের এই পদক্ষেপকে অনেকে মানবিক উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। কর্মস্থলের দায়িত্বে অবহেলার ফলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সাধারণত ক্ষতিপূরণ বা আর্থিক সাহায্য দেয়; তবে চাকরির সুযোগ দেওয়া সচরাচর দেখা যায় না।
অর্থনীতি ও নীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত কেবল আবুল কালামের পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তাই নয়, বরং এটি সরকারি সংস্থাগুলোর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিরও একটি ইতিবাচক উদাহরণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন,“যখন কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান এইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ায়, তা কেবল এক পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তাই দেয় না, বরং জনআস্থাও বাড়ায়। এই উদ্যোগ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এমন দৃষ্টান্ত স্থাপনে উৎসাহিত করবে।”
আইরিন পিয়া জানান, তার স্বামীর মৃত্যু পরিবারের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের এই সহায়তা তার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার সুযোগ দিচ্ছে।
তিনি বলেন,“আমি স্বামীকে হারিয়েছি, কিন্তু এই চাকরি আমাকে নতুন করে বাঁচার সাহস দিয়েছে। আমি চাই, যেন এমন দুর্ঘটনা আর কোনো পরিবারের জীবনে না আসে।”
Leave a comment