ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলার শিকার শিশুরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। অব্যাহত সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ তাদের শৈশবকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। আট বছর বয়সী শামা তুবাইলি এমনই এক শিশু, যে চুল হারিয়ে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে আছে।
খেলার দিন নেই
শামা জানায়, “ব্রাশ দিয়ে আঁচড়ানোর জন্য আমার এক চিলতে চুলও নেই। আমি আয়না ধরে থাকি, কারণ আমি আমার চুল আঁচড়াতে চাই।” একসময় সে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যেত, কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর তার জীবন বদলে যায়। ইসরায়েলি হামলার কারণে তার পরিবার একাধিকবার গৃহহীন হয়েছে।
যদুদ্ধের বিভীষিকা
হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়। এতে ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘের ইউনিসেফ জানিয়েছে, গাজার ১২ লাখ শিশুর মানসিক সহায়তা প্রয়োজন।
ওয়ার চাইল্ড অ্যালায়েন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯৬% শিশু মনে করে তারা শিগগিরই মারা যাবে, আর ৪৯% শিশু মৃত্যুর ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
চুল ফিরে টাক হয়ে গাছে
চিকিৎসকদের মতে, শামার চুল পড়ার কারণ নার্ভাস শক। রাফার এক বিমান হামলার পর তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। অন্য শিশুদের কটাক্ষের কারণে তার মানসিক যন্ত্রণা বেড়েছে। সে ঘর থেকে বের হয় না বললেই চলে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সিএনএন যখন শামার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে, তখন সে কাঁদতে কাঁদতে মাকে বলেছিল, মা, আমি ক্লান্ত, মরে যেতে চাই। আমার চুল কেন গজাচ্ছে না?
মানসিক স্বাস্থ্যের অভাবহ
গাজা কমিউনিটি মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রামের পরিচালক ডা. ইয়াসের আবু জামেই বলেন, শিশুরা ভয়াবহ মানসিক আঘাতের শিকার। একজন শিশু বলেছে, তার বন্ধুরা স্বর্গে গেছে, কিন্তু এক বন্ধুর মরদেহ পাওয়া গেছে মস্তকবিহীন। সে প্রশ্ন করেছে, মাথা ছাড়া কেউ স্বর্গে যেতে পারে?
গাজার সংকট নিরসনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরও উদ্যোগী হওয়া জরুরি। নতুবা, যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপে একটি সম্পূর্ণ প্রজন্ম মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।
Leave a comment