Home আন্তর্জাতিক মারা গেছেন উত্তর কোরিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান কিম ইয়ং
আন্তর্জাতিক

মারা গেছেন উত্তর কোরিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান কিম ইয়ং

Share
Share

উত্তর কোরিয়ার দীর্ঘ সময়ের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান ও কিম পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কিম ইয়ং ন্যাম আর নেই। ক্যানসারজনিত জটিলতা ও একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে ৯৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কিম ইয়ং ন্যামের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন দেশটির বর্তমান নেতা কিম জং উন, যিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “কিম ইয়ং ন্যাম ছিলেন আমাদের বিপ্লবের নিবেদিতপ্রাণ সৈনিক ও জনগণের অবিচল নেতা।”

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিম ইয়ং ন্যাম উত্তর কোরিয়ার শাসক পরিবারের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সহযোগীদের একজন ছিলেন। তিনি দেশের সর্বোচ্চ আইনসভা সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলির প্রেসিডিয়াম চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৯৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন—যা কার্যত রাষ্ট্রপ্রধানের পদ হিসেবে বিবেচিত হতো।

কিম ইয়ং ন্যাম ছিলেন এক অনন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি একাধারে উত্তর কোরিয়ার তিন প্রজন্মের নেতার অধীনে কাজ করেছেন—দেশটির প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুং, তার ছেলে কিম জং ইল, এবং বর্তমান নেতা কিম জং উন।

রাজনৈতিক জীবনের শুরুর দিকে তিনি দলের নিম্নপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও, ধীরে ধীরে উঠে আসেন শীর্ষ পর্যায়ে। ১৯৮০-এর দশকে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যেখানে তার কূটনৈতিক দক্ষতা ও স্থিতধী মনোভাবের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পান।

যদিও প্রকৃত ক্ষমতা সবসময় কিম পরিবারের হাতেই ছিল, তবুও কিম ইয়ং ন্যাম ছিলেন উত্তর কোরিয়ার আন্তর্জাতিক মুখ—যিনি বিশ্ব মঞ্চে দেশের নীতি, অবস্থান ও কূটনৈতিক বার্তা তুলে ধরতেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদারে কিম ইয়ং ন্যাম ছিলেন উত্তর কোরিয়ার অন্যতম মুখপাত্র।

২০১৮ সালের দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচ্যাং শীতকালীন অলিম্পিকে তিনি উত্তর কোরিয়ার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। সেখানেই তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে ছিল ঐতিহাসিক ঘটনা।

এছাড়াও তিনি এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার আরও দুই সাবেক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বহু আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও কূটনৈতিক সফরে তিনি উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন, যেখানে দেশটির প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি নরম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বলে মনে করা হয়।

কিম ইয়ং ন্যামের জন্ম ১৯২৮ সালে, যখন কোরীয় উপদ্বীপ জাপানি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল। তিনি পিয়ংইয়ংয়ের কিম ইল সুং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেন এবং পরে উচ্চশিক্ষার জন্য মস্কো যান। সেখানেই তিনি সমাজতান্ত্রিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হন। ১৯৫০-এর দশকে দেশে ফিরে এসে রাজনীতিতে যোগ দেন এবং উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দলের প্রশাসনিক কাঠামোতে ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান শক্ত করেন।

উত্তর কোরিয়ার রাজনীতিতে যেখানে নেতৃত্বের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কর্মকর্তাই হারিয়ে যান, সেখানে কিম ইয়ং ন্যাম ছিলেন দুর্লভ । তিনি একাধারে বিশ্বস্ততা, ধৈর্য্য এবং আদর্শিক অটলতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, কিম ইয়ং ন্যামের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান প্রমাণ করে যে, তিনি কেবল রাজনৈতিকভাবে দক্ষ ছিলেন না, বরং কিম পরিবারের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যের মাধ্যমে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব থেকে অবসর নেন কিম ইয়ং ন্যাম। অবসর নেওয়ার পরও তিনি দলের পরামর্শদাতা হিসেবে সীমিতভাবে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।

তার মৃত্যুর পর উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে শোকবার্তা প্রচার করা হয়, যেখানে বলা হয়,“তিনি আমাদের বিপ্লবী ঐতিহ্যের ধারক ছিলেন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

কিম ইয়ং ন্যামের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়, যেখানে শীর্ষ পর্যায়ের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কিম ইয়ং ন্যামের মৃত্যু উত্তর কোরিয়ার রাজনীতিতে এক যুগের সমাপ্তি ঘটিয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

জাতীয় নির্বাচনের পর এবারের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে: ধর্ম উপদেষ্টা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরেই অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। নির্বাচনী প্রস্তুতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধর্ম...

কিশোরগঞ্জে গর্তের পানিতে ডুবে দুই বছরের শিশুর মৃত্যু

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরশহরের বড়খারচর মহল্লায় বাড়ির পাশের একটি গর্তের ময়লা পানিতে পড়ে দুই বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিশুর নাম ফরহাদ, সে...

Related Articles

ভারতের তেলেঙ্গানায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ১৯

ভারতের তেলেঙ্গানায় শেভেলা মন্ডলে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে...

গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েলি হামলা , ৪৫ মরদেহ হস্তান্তর

যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা চালানো হয়েছে। এতে...

আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহত ২৭, আহত ৫৩০

আফগানিস্তানে আবারও ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। সোমবার (স্থানীয় সময় রাত ১টার দিকে)...

ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত আফগানিস্তানের ‘হযরত আলীর মাজার’

আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক মাজার-ই-শরীফের নীল মসজিদ ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ‘হযরত আলীর...