মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় মাত্র সাত মাসে সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হয়েছেন ইতালির নাগরিক দুই কিশোর। তাদের পিতা মামুন হাওলাদার দীর্ঘদিন ধরে ইতালিতে প্রবাস জীবনযাপন করলেও ছেলেদের ইসলামী শিক্ষায় গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে পাঠান। বর্তমানে দুই ভাই কোরআনের হাফেজ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
রাজৈরের আলমদস্তা এলাকার ঐতিহ্যবাহী জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলূম রাজৈর মাদরাসায় পড়াশোনা করে এই সাফল্য অর্জন করেছে তারা। কোরআনের হাফেজ হওয়া দুই ভাই হলেন—মাদারীপুর সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া গ্রামের বাসিন্দা ইতালি প্রবাসী মামুন হাওলাদারের ছেলে আব্দুর রহমান হাওলাদার (১৫) ও আব্দুর রহিম হাওলাদার (১৩)। তারা জন্মসূত্রে ইতালির নাগরিক।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জোহরের নামাজের পর আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাফেজের মর্যাদার পাগড়ি পরিয়ে দেন মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মুফতি রেজাউল ইসলাম। এ সময় ফুলের মালা দিয়ে শুভেচ্ছা জানান মাদরাসার শিক্ষক ও স্থানীয় আলেমরা। উপস্থিত ছিলেন তাদের বাবা মামুন হাওলাদারও।
মাদরাসার শিক্ষকদের মতে, মাত্র সাত মাসে ৩০ পারা কোরআন মুখস্থ করা একটি দৃষ্টান্তমূলক অর্জন। সাধারণত কোরআন হিফজ সম্পূর্ণ করতে কয়েক বছর সময় লাগে। কিন্তু নিয়মিত অধ্যবসায় ও কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে দুই ভাই স্বল্প সময়ে সফল হয়েছে।
ইতালি প্রবাসী বাবা মামুন হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেন, “আমার দুই ছেলে ইতালিতে জন্মগ্রহণ করেছে। তারা নাগরিকত্বে ইতালিয়ান হলেও আমি চাই তারা ইসলামী শিক্ষায় বড় হোক। মাওলানা বানানোর স্বপ্ন নিয়ে দেশে এনে মাদরাসায় ভর্তি করাই। আজ তারা হাফেজ হয়েছে, এতে আমি গর্বিত। এখন তাদের আবার ইতালি নিয়ে যাব এবং পরবর্তীতে মিশরে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য পাঠাব।”
মামুন হাওলাদার জানান, গত ২৩ বছর ধরে তিনি ইতালিতে কর্মরত আছেন। পরে স্ত্রীকেও নিয়ে যান সেখানে। প্রবাস জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও নিজের সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষায় প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন সবসময় বুকে লালন করেছেন।
পরিবার ও স্থানীয়রা দুই কিশোরের সাফল্যে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আব্দুর রহমান ও আব্দুর রহিম মেধাবী ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ছাত্র। তাদের অর্জন অন্য শিক্ষার্থীদেরও অনুপ্রাণিত করবে।
গ্রামের অনেক মানুষ তাদের সাফল্যকে ‘ইতালির নাগরিক হয়ে বাংলাদেশে এসে ধর্মীয় শিক্ষায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত’ হিসেবে দেখছেন। অনেকেই মনে করছেন, বিদেশে বেড়ে ওঠা প্রবাসী সন্তানেরা চাইলে ইসলামী শিক্ষায়ও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
বাবা মামুন হাওলাদারের আশা, তার দুই ছেলে মিশরে গিয়ে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়সহ খ্যাতনামা ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে বড় আলেম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, “আমি চাই, তারা ইসলামের খেদমত করুক এবং বিশ্বে বাংলাদেশ ও ইসলামী শিক্ষার মর্যাদা বাড়াক।”
Leave a comment