মার্কিন সামরিক বাহিনী ভেনেজুয়েলার একটি সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌযানে হামলা চালিয়েছে, যাতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ হামলার ঘোষণা দেন। তিনি একে ‘কিনেটিক স্ট্রাইক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, ট্রাম্প দাবি করেছেন নৌযানটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবস্থান করছিল এবং এতে কোকেন ও ফেন্টানিল বহন করা হচ্ছিল। তার ভাষায়, “এই সকালেই আমার আদেশে মার্কিন সামরিক বাহিনী সাউথকম অঞ্চলে চিহ্নিত মাদকচক্র ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বারের মতো সরাসরি হামলা চালিয়েছে।”
হামলার পর ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়, যেখানে একটি নৌযান বিস্ফোরিত হয়ে আগুনে পুড়তে দেখা যায়। ভিডিওটি ‘আনক্ল্যাসিফায়েড’ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও এটি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এটি চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় হামলা। এর আগে ২ সেপ্টেম্বর একটি স্পিডবোটে হামলা চালানো হয়, যাতে ১১ জন নিহত হন। তখন ওয়াশিংটন দাবি করেছিল, নিহতরা ভেনেজুয়েলার কুখ্যাত গ্যাং ‘ট্রেন ডে আরাগুয়া’র সদস্য। তবে ভেনেজুয়েলা সরকার সে দাবি প্রত্যাখ্যান করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। মার্কিন কংগ্রেসেও এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। সিনেটর অ্যাডাম শিফ ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্টের একতরফা সামরিক পদক্ষেপ রোধে ওয়ার পাওয়ারস অ্যাক্ট অনুযায়ী প্রস্তাব উত্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ঘটনাটিকে “যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন” বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এ ধরনের পদক্ষেপ দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সংকটাপন্ন করছে। তার ভাষায়, “ওয়াশিংটন কার্যত সব ধরনের কূটনৈতিক যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।”
দক্ষিণ ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ইতিমধ্যে বেড়েছে। পুয়ের্তো রিকোয় পাঁচটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সাতটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি পারমাণবিক সাবমেরিনও সেখানে অবস্থান করছে। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, কেবল সমুদ্রপথে নয়, স্থলপথেও মাদকচোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন সামরিক অভিযানের সময়, লক্ষ্যবস্তু ও আইনি বৈধতা নিয়ে পর্যাপ্ত স্বচ্ছতা না থাকায় বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। একইসঙ্গে ভেনেজুয়েলা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সূত্র: রয়টার্স
Leave a comment